স্মার্ট যুগে আমাদের জীবনের অনেকটাই নির্ভর করছে বেতার প্রযুক্তির ওপর। অফিসে, রাস্তায় কিংবা ঘরে বসে—স্মার্টফোনের সঙ্গে ইয়ারবাড, স্মার্টওয়াচ বা স্পিকার যুক্ত করতে এখন ব্লুটুথ অপরিহার্য। কিন্তু জানেন কী, এই সুবিধাজনক প্রযুক্তিই হতে পারে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের বড় মাধ্যম? সারাক্ষণ ব্লুটুথ চালু রাখলে বাড়তে পারে হ্যাকিং ও সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি। নিজের গোপনীয় ডেটা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুরক্ষায় তাই সচেতনতা এখন সময়ের দাবি। চলুন তাহলে জেনে নিই এমন ৫টি সমস্যা, সতর্ক না হলে যেসবের ঝামেলায় পড়তে পারেন আপনিও।
ব্লুজ্যাকিং: মোবাইল ও গ্যাজেটের ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে সাইবার অপরাধের কৌশল। এর একটি পরিচিত নাম ব্লুজ্যাকিং—যেখানে অচেনা কেউ ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসে অবাঞ্ছিত বার্তা বা ফাইল পাঠিয়ে দেয়। এতে শুধু গোপনীয়তাই বিঘ্নিত হয় না, বরং অনিচ্ছাকৃতভাবে সংবেদনশীল তথ্যও অন্যের হাতে চলে যেতে পারে।
ব্লুস্নারফিং: আরও ভয়াবহ এক পদ্ধতি হলো ব্লুস্নারফিং। এটি এমন এক ধরনের সাইবার আক্রমণ, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীর মেসেজ, ছবি ও অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া ফাইল চুরি করতে পারে। ভয়াবহ বিষয় হলো, ভুক্তভোগীরা অনেক সময় জানতেই পারেন না যে তাদের তথ্য ইতোমধ্যে হাতছাড়া হয়ে গেছে।
ব্লুবাগিং: ব্লুবাগিংকে বলা যায় সাইবার জগতের এক গোপন ফাঁদ। এই কৌশলের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্লুটুথ ডিভাইসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে—কল, মেসেজ এমনকি মাইক্রোফোন ব্যবহারের তথ্যও জানতে পারে। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই তারা ফোনের অভ্যন্তরীণ তথ্য অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হয়।
এমআইটিএম ও ব্লুবোর্ন: ব্লুটুথ সংযোগে সবচেয়ে জটিল আক্রমণগুলোর একটি হলো Man-in-the-Middle (MITM)। এখানে হ্যাকার দুটি ডিভাইসের মধ্যবর্তী অবস্থান নিয়ে তথ্য বিনিময়ে হস্তক্ষেপ করে। অন্যদিকে ব্লুবোর্ন হলো এমন এক দুর্বলতা যা কোটি কোটি ব্লুটুথ ডিভাইসে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে ডিভাইসের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন বা তথ্য বিকৃত করা সম্ভব হয়—তাও আবার মালিকের কোনো অনুমতি ছাড়াই।
এনক্রিপশনের দুর্বলতা ও বিএলই ঝুঁকি: বেশ কিছু ব্লুটুথ ডিভাইস এখনও দুর্বল এনক্রিপশন বা ডিফল্ট পিন পদ্ধতি ব্যবহার করে, যা সহজেই ব্রুট-ফোর্স আক্রমণের মাধ্যমে হ্যাক করা যায়। পাশাপাশি, স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ব্যান্ডের মতো ব্লুটুথ লো এনার্জি (BLE) ডিভাইসগুলোতেও ডেটা ম্যানিপুলেশনের ঝুঁকি থেকে যায়।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন
১. ব্লুটুথ ব্যবহার শেষে সবসময় বন্ধ করে রাখুন
২. অপরিচিত কোনো ডিভাইসের সঙ্গে পেয়ারিং এড়িয়ে চলুন
৩.প্রয়োজন ছাড়া ব্লুটুথকে ‘ডিসকভারেবল’ মোডে রাখবেন না
৪.নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট ইনস্টল করুন
৫.পাবলিক জায়গায় ব্লুটুথ ব্যবহার যতটা সম্ভব কমান
শেষ কথা: প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ততই বাড়ছে তথ্যচুরির ঝুঁকি। একটু অসতর্কতা আপনার ব্যক্তিগত ছবি, ব্যাংক তথ্য বা মেসেজ অন্যের হাতে পৌঁছে দিতে পারে। তাই ব্লুটুথের মতো সহজ প্রযুক্তি ব্যবহারেও চাই সচেতনতা—কারণ, সুবিধা পেতে গিয়ে যেন বিপদ ডেকে না আনেন আপনি নিজেই।
সূত্র : এফসিসি ও টেকজুম