নাসা আবারও চাঁদে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, চীনও চাঁদে প্রথম পৌঁছানোর লক্ষ্য স্থির করেছে। এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য শুধু উপনিবেশ গড়া নয় বরং চাঁদের এক অমূল্য সম্পদ হিলিয়াম-৩ দখল করা।
চাঁদের রেগোলিথ বা পৃষ্ঠের মাটি এই হিলিয়াম-৩-এ সমৃদ্ধ।
এটি একটি হালকা, অ-তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ। চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো চৌম্বকক্ষেত্র না থাকায়, সৌর বায়ু কোটি কোটি বছর ধরে এই উপাদান সেখানে জমা করেছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হিলিয়াম-৩ ভবিষ্যতের শক্তি বিপ্লব ঘটাতে পারে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মতে, এই উপাদান ব্যবহার করে ফিউশন রিঅ্যাক্টর থেকে পরিষ্কার ও নিরাপদ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব—যেখানে কোনো তেজস্ক্রিয় বর্জ্য থাকবে না।
বর্তমান পারমাণবিক বিভাজন প্রযুক্তি বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরি করে কিন্তু হিলিয়াম-৩ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
তবে পৃথিবীতে হিলিয়াম-৩ অত্যন্ত বিরল। এটি কেবল ট্রিটিয়ামের ক্ষয়ের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় এবং প্রতি বছর কয়েক হাজার লিটারই তৈরি হয়। অথচ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চাঁদের মাটিতে ছড়িয়ে আছে মিলিয়ন টন হিলিয়াম-৩।
অ্যাপোলো মিশনের ভূতাত্ত্বিক হ্যারিসন শ্মিট কয়েক দশক আগেই এই সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। তাই এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত ও ইউরোপ চাঁদে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মরিয়া। কারণ যে দেশ আগে সেখানে পৌঁছাবে, তার হাতেই থাকবে এই সম্পদের নিয়ন্ত্রণ।
চন্দ্রপৃষ্ঠে স্থায়ী ঘাঁটি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে—যেখানে কেবল মূল্যবান ধাতু আহরণই নয়, মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতিও নেওয়া হবে।
যদিও এসব এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায় তবু নাসা ও চীন এই দশকের শেষ নাগাদ চাঁদের খনিজ আহরণ শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে এই সম্পদকে ঘিরে ব্যবসায়িক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জেডএমই সায়েন্স জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ব্লুফর্স স্টার্টআপ ইন্টারলুন-এর সঙ্গে প্রতি বছর এক হাজার লিটার চাঁদের হিলিয়াম-৩ কেনার জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে।
অন্যদিকে, ব্লু অরিজিন তাদের ‘প্রজেক্ট ওয়েসিস’ ঘোষণা করেছে—যার মাধ্যমে কক্ষপথ থেকে চাঁদের জল বরফ ও হিলিয়াম-৩ সম্পদের বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করা হবে।
নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শন ডাফি সম্প্রতি বলেছেন, ‘চীন আগে পৌঁছাতে পারবে না।’ অথচ বেইজিংও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—তারা দক্ষিণ মেরু অন্বেষণে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে জলবরফ থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
তবে প্রকৃত চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে হিলিয়াম-৩ ফিউশন প্রযুক্তিতে। উইসকনসিন–ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জেরাল্ড কুলসিনস্কি একসময় এর জন্য একটি ক্ষুদ্র চুল্লি নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউ কয়েক মিনিটের বেশি সময় ধরে নেট শক্তি বৃদ্ধিসহ টেকসই ফিউশন বিক্রিয়া চালাতে পারেননি।
অর্থাৎ, চাঁদে হিলিয়াম-৩ আহরণ হয়তো একদিন সম্ভব হবে, কিন্তু সেটিকে শক্তিতে রূপান্তর করা—এখনও মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ।
সূত্র : আজকাল