মাত্র তিন বছর বয়সেই হয়েছেন পিতা! আশ্চর্যজনক হলেও ঘটনাটি অনেকটাই এ রকম। কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় অর্থের বিনিময়ে বয়স জালিয়াতি করে সন্তানের থেকে মাত্র তিন বছরের বড় পিতা নিয়েছেন চাকরি। উপজেলার গ্রামপুলিশ নিয়োগে সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা। তবে এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে রাজি নন কেউ।
কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন উপজেলা রৌমারী। এ উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। সংসার জীবনে তার রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে। সন্তানদের বিয়েও দিয়েছেন কয়েক বছর আগে।
গ্রামপুলিশের চাকরির জন্য মোটা অংকের বিনিময়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলীর সহায়তায় জন্ম নিবন্ধনে বয়স জালিয়াতি করে ২৯ বছর দেখিয়ে নিয়েছেন চাকরিও। হাফিজুর রহমান বয়স জালিয়াতি করে গত ২৮ আগস্ট যোগদান করেন ওই ইউনিয়নে।
গত আগস্ট মাসে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ১৯ জন গ্রামপুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি প্রায় ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা করে গড়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্রটি।
এর আগে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরের ৬ মে যাদুরচর ইউপিতে ২ জন, দাঁতভাঙ্গা ইউপিতে ৭ জন, রৌমারী ইউপিতে ৫ জন, বন্দবেড় ইউপিতে ৪ জন এবং শৌলমারী ইউপিতে ১ জন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রের ভোটার তালিকায় যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছামাদ-দরদী খাতুন দম্পতির পুত্র হাফিজুর রহমান। সেখানে হাফিজুরের বয়স ৭ মে ১৯৮৫ সাল। তিনি চলতি বছর ২৭ মে জন্ম-নিবন্ধন করেছেন ৭ মে ১৯৯৬ সাল দেখিয়ে। অথচ তার ছেলে নয়ন মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ১ মার্চ ১৯৯৯। এতে পুত্রের চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড় পিতা। আর বড় মেয়ের থেকে দেড় বছরের বড় পিতা।
ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবিউল হক বলেন, হাফিজুরসহ তার স্ত্রী, সন্তান সবাই ভোটার হয়েছেন। জন্ম-নিবন্ধন সনদ দিয়ে বয়স জালিয়াতি করে হাফিজুর রহমান গ্রামপুলিশের চাকরি নিয়েছেন। অথচ তার এনআইডি কার্ড রয়েছে। বয়স জালিয়াতি করে চাকরি তো আর এমনি এমনি কেউ দেয় না? এখানে অবশ্যই মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে। কিভাবে চাকরি হলো তা নিয়োগদাতারাই ভালো বলতে পারবেন?
ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হযরত আলী বলেন, হাফিজুর তার ছেলেমেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের ঘরেও সন্তান রয়েছে। একাধিকবার তারা ভোট প্রদান করেছেন; কিন্তু বয়স জালিয়াতি করে এভাবে গ্রামপুলিশের চাকরি অর্থ লেনদেন ছাড়া সম্ভব নয়। যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রামপুলিশ বলেন, আমার কাছ থেকে চেয়ারম্যান তিন লাখ টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন। শুনেছি গ্রামপুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি ৩-৪ লাখ টাকা করে নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর ও শমসের আলী বলেন, ইউনিয়নের যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে গ্রামপুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিয়োগের এমন কারসাজির তদন্ত করে বিচারের দাবি স্থানীয়দের।
যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী হাফিজুর রহমানের স্কুল ও জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করে আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে জানান।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, বয়স জালিয়াতি করে চাকরি দেওয়া হয়েছে- এমন কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, আপনার নিকট প্রথম জানতে পারলাম। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
সূত্র: যুগান্তর