জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর: [২] লক্ষ্মীপুর পৌরসভার জন বসতিপূর্ণ এলাকা ও একটি বিদ্যালয়ের পাশে থাকা পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে ছাড়াচ্ছে পঁচা দুর্গন্ধ। এতে পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটেরপুল এলাকার দক্ষিণ দারোগা বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকালে সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছে। এতে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে দুর্গন্ধে পাঠদান বন্ধ রেখে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা৷
[৩] পৌর কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালীপনায় বিদ্যালয়সহ আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যদিও পাশেই পৌরসভার নির্ধারিত ড্রাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সেখানে না ফেলে পুকুর ভরাটের উদ্দেশ্যে উম্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলেছে পৌরসভার লোকজন।
[৪] স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্দিষ্ট ড্রাম্পিং স্টেশনে ময়লা না ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষ যত্রতত্র স্থানে আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে।
[৫] পৌরসভার ইটের পুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান, মো. রনি, তুহিন হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কের ইটেরপুর টার্নিং পয়েন্টে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি পুকুর রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পৌর বাসিন্দাদের ব্যবহৃত ময়লা এনে ওই পুকুরে ফেলা হচ্ছে। আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকাবাসী স্বাস-নিঃস্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদের।
[৬] তারা জানায়, পুকুরের অপর পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবর্জনার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে থাকতে পারছে না। এতে বাধ্য হয়ে তারা পাঠদান বন্ধ রেখে সড়কে এসে আন্দোলন করে।
[৭] স্থানীয় দিদারুল ইসলাম বলেন, ইটেরপুল এলাকাটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মানুষের ঘর-বাড়ি রয়েছে। দোকানপাট রয়েছে। ময়লার গন্ধে মানুষজন থাকতে পারছে না।
[৮] পুকুর উত্তর পাড়ের থাকা একটি বাড়ির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। পুকুর ভরাট করতে হলে বালু বা মাটি দিয়ে ভরাট করুক। কিন্তু ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরাট করতে হবে কেন?
[৯] একই বাড়ির বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, আবর্জনার কারণে পোকামাকড় হচ্ছে। মশা-মাছির উৎপাত বেড়ে গেছে। দুর্গন্ধে শিশুদেরকে নিয়ে থাকতে পারি না। সামনে রমজান মাস আসছে। তখন বসবাস করা আরও কষ্ট হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ যাতে পুকুরটি ময়লা দিয়ে ভরাট না করে। ময়লাগুলো অপসারণের দাবি জানান তিনি।
[১০] সড়কের দক্ষিণ পাশে থাকা চা দোকানদার নুরুল আমিন বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে কাস্টমাররা দোকানে আসতে পারে না। তাই দোকানের বেচাবিক্রিও কমে গেছে।
[১১] বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২দিকে দারগা বাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী নেই। শুধুমাত্র শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে বসে আছে।
[১২] শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রায় বর্মন বলেন, শিক্ষার্থীরা ময়লার দুর্গন্ধে শ্রেণীকক্ষে থাকতে পারে না। সকালে সকল শিক্ষার্থী শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে ময়লা ফেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিষয়টি আমি মুঠোফোনে মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করার অনুরোধ করেছেন। এছাড়া ময়লাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
[১৩] প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা শ্রেণী কক্ষে থাকতে পারে না। তাই তারা নিজজেরাই বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে।
[১৪] এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের বাঁকা অংশ সোজা করার জন্য পুকুরটি ভরাট করা প্রয়োজন৷ কিন্তু সেটি পৌরসভাকে ময়লা দিয়ে ভরাট করতে বলা হয়নি। প্রয়োজনে বালু বা মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে।
[১৫] পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় চলাকালীন ওইস্থানে আপাতত ময়লা ফেলা হবে না।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :