শিরোনাম
◈ আরপিও ২০ ধারার সংশোধনী: রাজনৈতিক অধিকার বনাম আইনগত বাধ্যবাধকতা ◈ পাঁচ দুর্বল ইসলামী ব্যাংক একীভূত: নতুন ‘সম্মিলিত ব্যাংক’ গঠনের পথে সুযোগ ও ঝুঁকি ◈ নৌ, বস্ত্র ও পাট, পরিকল্পনা ও সমবায়ে নতুন সচিব ◈ যারা চাপে পড়বেন নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে ◈ প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসা নিয়ে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ সাংবাদিককে কনুই মারলেন বিএনপি নেতা সালাম, ভিডিও ভাইরাল ◈ বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা ইস্যুতে যে পদক্ষেপ নিল ভারতীয় দূতাবাস ◈ গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে সোমবার! ◈ দুর্দান্ত ব‌্যা‌টিং‌য়ে অঙ্কনের শতক, ঘুরে দাঁড়ালো ঢাকা বিভাগ 

প্রকাশিত : ০১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৬ বিকাল
আপডেট : ০৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি, ৮ ঘন্টায় বৃষ্টিতে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট

মো. রমজান আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্মরণকালের ভারি বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে বাড়িতেও প্রবেশ করেছে পানি। এতে ঘরের আসপারপত্র পানির নিচে তলিয়ে গেছে। 

শুধু তাই নয়, এক টানা ৭ থেকে ৮ ঘন্টা বৃষ্টিতে জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আবাদি ফসল ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পানিতে ভেসে গেছে অনেক পুকুর। এতে মৎস্য চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জানা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার সারাদিনই মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এরপরেই রাত সাড়ে ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারিবৃষ্টিপাত হতে থাকে। যা চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের নিউ মার্কেট, বালু বাগান, নিমতলা, অক্টোমোড়, ফুড অফিস, বাতেনখার মোড়, মাহাডাঙ্গা, রুহুল বাদ, কোট চত্বরসহ বিভিন্ন নিম্ন এলাকায় হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে।  এছাড়াও অতিবৃষ্টিতে ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। 

অন্যদিকে সদর উপজেলার হোসেনডাঙ্গায় ও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পাগলা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতুর দুইধার থেকে মাটি সরে গেছে। যা চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

পৌরবাসীর দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকায় বিভিন্ন স্থানে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জলাশয় ও খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করা হয়েছে।  যার ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক পথগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। একসময় এই জলাশয়গুলোই ছিল শহরের অতিরিক্ত পানি টেনে নেয়ার প্রাকৃতিক আধার। বিশেষ করে শহরের মহানন্দা বাসস্ট্যাণ্ড এলাকার কয়েকটি খালটি ভরাট করা হয়েছে। যা দেখে বোঝায় উপায় নেই এখানে খাল ছিল।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরএলাকার বেলেপুকুর বাসিন্দা বাবর আলী রুমন বলেন, অতিবৃষ্টির কারনে বেলেপুকুর এলাকায় আমাদের বাড়িসহ ১০০টি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।  যার মধ্যে প্রায় ৫০ টির বেশি বাড়িতে পানি ডুকে পড়েছে।

শহরের গণপূর্ত বিভাগের আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, সারারাত বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।বাড়ির সামনে হাটুপানি। সারা রাত পানির সাথে থাকতে হয়েছে। 

তাদের দাবি, শহরের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে। এক সাথে অনেক ড্রেন হলেও কাজ শেষ না হওয়া দ্রুত পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এর ফলে রাস্তায় হাঁটু পানি জমে গেছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরীসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিলি মিটার, শিবগঞ্জ ১৭৫ মি.মি. গোমস্তাপুরে ১৮০মি.মি. নাচোলে ১৭৫ ও ভোলাহাটে ১৬৫মি.মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। গড়ে জেলায় মোট বৃষ্টিপাতর রেকর্ড ১৯১ মিলি মিটার। ভারিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু ফসলি জমি। 

স্মরণকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ভারী বৃষ্টিতে জেলায় ৪ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ হাজার ২৩৫ হেক্টর রোপা আমন, ৩৭ হেক্টর আলু, ৯১৭ হেক্টর সরিষা, শাকসবজি ৩১৬ হেক্টর, ২৪৪ হেক্টর পেঁয়াজ, ২৫০ হেক্টর মাসকলাই, ৬৮ হেক্টর ভূট্টা, ১৩ হেক্টর স্ট্রবেরি, ৩৭৯ হেক্টর রসুন। 

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিতে পাকা ধান হেলে পড়েছে সেগুলো কিছুটা ক্ষতি হবে। এর পাশাপাশি শাক সবজির কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে বা বৃষ্টি না হলে ফসলের বেশি ক্ষতি হবে না।

এদিকে অতিবৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত ঘটে। ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখী ৫ আপ রাজশাহী কমিউটার ট্রেন অতিরিক্ত পানির কারণে বড় পুকুরিয়া এলাকায় চার ঘণ্টা আটকা পড়ে। এর ফলে আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ছাড়ে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন মাস্টার শহিদুল ইসলাম জানান, সারারাত বৃষ্টিতে আমনুরা থেকে সদর উপজেলা বড় পুকুরিয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার ট্রানের লাইন পানির নিচে তলিয়ে যায়। এর ফলে পুকুরিয়া এলাকায় ট্রেন চলাচল করতে পারছিলনা। সেখানে ৫ আপ কমিউটার ট্রেনটি সারারাত আটকা ছিল।  

তিনি আরও জানান, বৃষ্টির পানি নামার পর শনিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে কমিউটার ট্রানটি স্টেশনে প্রবেশ করে। আর বনলতা ট্রেনটি নির্ধারিত শিডিউল থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে থেকে ঢাকার উদেশ্য ছেড়ে যায়।

এছাড়াও ভারিবৃষ্টিতে জেলায়  অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে। এতে করে মৎস্য চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়