এন. এ. মুরাদ, মুরাদনগর: বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার নয় বছর পার হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। সময় গড়ালেও খুনিদের শনাক্ত করা যায়নি, মেলেনি ন্যায়বিচার—এখনও অপেক্ষায় তনুর পরিবার।
তনুর খালা সাজেদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “গত আট বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তনুর হত্যার বিচার হয়নি। এখন নতুন সরকারের কাছে আমরা ন্যায়বিচার আশা করছি।”
তিনি আরও জানান, তনুর বাবা-মা মানসিক ও শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। “তাদের একটাই আকাঙ্ক্ষা—মৃত্যুর আগে যেন মেয়ের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেন।”
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের পাশে জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকে মামলাটি তদন্ত করেছে চারটি সংস্থা—থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সিআইডি এবং সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এতদিনে ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু মামলার অগ্রগতি হয়নি।
২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি পিবিআই সদর দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়। প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো ফল মেলেনি। বর্তমানে মামলার দায়িত্বে আছেন পিবিআই কল্যাণপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “এতদিন রাজনৈতিক সরকার ছিল, খুনিরা আড়ালে ছিল। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মেয়ের হত্যার বিচার চাই। বিচার না হলে মরেও শান্তি পাব না।”
তনুর ভাই আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “নতুন তদন্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার নয় মাস পার হলেও একবারও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। প্রথমে ফোন ধরলেও এখন আর কথা বলেন না।”
তদন্ত কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মামলাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি। আগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, আমরাও তদন্ত শেষে ঘটনাস্থলে যাব। তদন্তে কোনো অবহেলা নেই।”
নয় বছর পরেও বিচারহীন তনু হত্যা মামলা এখনো পরিবারকে কাঁদাচ্ছে — সময় গড়াচ্ছে, ন্যায়বিচার অধরাই রয়ে গেছে।