সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি শেখ হাসিনার নামে যমুনা টিভির আদলে বানানো একটি ফটোকার্ড ছড়িয়ে পড়েছে। সে ফটোকার্ড ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের খবর শুনে তিনি ভারতের নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার একটি ছবিও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি শেখ হাসিনার নয়।
ফ্যাক্টচেকিং সাইট ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটা শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কোনো ছবি নয় বরং, ভিন্ন এক নারীর ছবি এডিট করে এটি বানানো। দিল্লি বিমানবন্দরে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল ৮২ বছর বয়সী এই নারী যাত্রীকে। যদিও তার পরিবার আগে থেকে হুইলচেয়ার বুক করে রেখেছিল, এরপরও এয়ার ইন্ডিয়া তাকে হুইলচেয়ার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছানোর পর এই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে যান এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
২০২৫ সালের ১২ মে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার আগে ঘটে এই ঘটনাটি। তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল ফটোকার্ডটি বিকৃত।
ফ্যাক্টওয়াচ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যমুনা টিভির আদলে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ হিসেবে ১৩ মে ২০২৫ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই তারিখে যমুনা টিভির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এমন কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এরপরে এই ফটোকার্ডে শেখ হাসিনার হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার ছবি দাবিতে যেই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে তার উৎস খোঁজার জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। এর ফলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ২০২৫ সালের ৮ মার্চ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে ভাইরাল ছবির মতো একটি ছবি পাওয়া যায় । সেখানে শেখ হাসিনা নয় বরং, ভিন্ন এক নারীকে দেখতে পাওয়া যায়। এই নারীর মুখের শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত করে বিকৃত করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ৮২ বছর বয়সী এই নারীর হাঁটতে সমস্যা থাকায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ারের জন্য বুকিং দেওয়া ছিল। কিন্তু দিল্লি বিমানবন্দরে তার জন্য হুইলচেয়ার সরবরাহ না করার কারণে তাকে টার্মিনালে পৌঁছানোর জন্য বেশ কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হয়। এতে করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ে যান এবং তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রী হওয়ার কারণে এই ঘটনার পরে এয়ারলাইন্সটি বিতর্কের মুখেও পড়ে।
ভাইরাল ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্যাকটওয়াচ আরও জানায়, পরবর্তীতে, হিন্দুস্তান টাইমসের প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আলোচিত এই নারীর নাম রাজ পাসরিচা, যিনি ভারতীয় এক সেনা কর্মকর্তার বিধবা স্ত্রী। ৪ মার্চ এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন রাজ পাসরিচা। তিনি একটি হুইলচেয়ার আগে থেকে বুক করেছিলেন, যা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু পরিবার বিমানবন্দরে পৌঁছালে, এয়ার ইন্ডিয়া অনুরোধকৃত হুইলচেয়ারটি সরবরাহ করেনি। এই তথ্যের সোর্স হিসেবে তার নাতনি পারুল কানওয়ারের এক্স-এ করা একটি পোস্টকে ব্যবহার করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় চলতি বছরের ১২ মে।
ফ্যাক্টওয়াচ উল্লেখ করে, রাজ পাসরিচার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনেক পরে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি ভিন্ন এক নারীর স্থানে শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে বিকৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে, মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমেও শেখ হাসিনার মৃত্যু সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ কারণে ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ বিকৃত হিসেবে সাব্যস্ত করে।