গ্রীষ্মের দুপুরে বার্ন ও বাসেল শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে চলা আরে ও রাইন নদীতে গা ভাসিয়ে দেওয়া সুইজারল্যান্ডের মানুষজনের জন্য কেবল বিনোদন নয়, বরং এক অভিনব যাতায়াত ব্যবস্থা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও নদীতে সাঁতার কেটে অফিসে যান দেশটির রাজধানী বার্নের মানুষজন।
বার্ন শহরের বুক চিরে বয়ে গেছে আল্পস পর্বতমালা থেকে জন্ম নেওয়া আরে নদী। এর জল কাঁচের মতো স্বচ্ছ এবং তার রঙ মনোমুগ্ধকর ফিরোজা। গ্রীষ্মকালে যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন এই নদীই হয়ে ওঠে শহরের প্রাণকেন্দ্র। এটি তখন আর শুধু একটি নদী থাকে না, হয়ে ওঠে সুইজারল্যান্ডের অন্যতম সেরা সুইমিং পুল, যোগাযোগের মাধ্যম এবং সামাজিক মেলামেশার এক অনন্য ঠিকানা।
প্রশ্ন আসতেই পারে, মানুষজন তাদের দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে কীভাবে নদীতে ভাসে? এর সমাধান লুকিয়ে আছে এক জাদুকরী ব্যাগের মধ্যে, যার নাম ‘ভিকলেফিশ’। জার্মান এই শব্দটির অর্থ 'মাছ-ব্যাগ'। মাছের আকৃতির এই জলরোধী ব্যাগটিই আরে নদীতে ভেসে চলার মূল চাবিকাঠি। বাসিন্দারা তাদের শুকনো পোশাক, তোয়ালে, মানিব্যাগ, এমনকি ল্যাপটপ পর্যন্ত এই ব্যাগের ভেতর রেখে এর মুখটি ভালোভাবে পেঁচিয়ে আটকে দেন। এতে বাতাস ভর্তি হয়ে ব্যাগটি একটি ছোটখাটো ভেলার মতো ফুলে ওঠে। এরপর এই ব্যাগটিকেই লাইফ-বোটের মতো ধরে মানুষ নিশ্চিন্তে নদীতে গা ভাসিয়ে দেয়। এটি তাদের জিনিসপত্রকে যেমন শুকনো রাখে, তেমনি ভেসে থাকতেও সাহায্য করে। নদীর তীরে তাকালে গ্রীষ্মকালে এই লাল, নীল, হলুদ রঙের 'ভিকেলফিশ' হাতে বহু মানুষকে দেখা যায়।
যদিও বিষয়টি মূলত বিনোদন এবং গরম থেকে বাঁচার একটি উপায়, তবে এটি বার্নের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেকেই কাজ শেষে নদীর উজানের কোনো স্থান থেকে স্রোতে গা ভাসিয়ে দেন এবং ভাটিতে থাকা নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি কোনো ঘাট দিয়ে উঠে পড়েন। এটি তাদের কাছে যানজট এড়িয়ে বাড়ি ফেরার এক ক্লান্তিহীন এবং আনন্দদায়ক মাধ্যম।