গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এর সম্পাদকীয় বিভাগ বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন ১৫০ জনের বেশি লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও শিল্পী। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের পক্ষপাতমূলক কাভারেজের দায় স্বীকার না করা পর্যন্ত সেখানে আর কোনো লেখা না দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন তারা। চিঠিতে স্বাক্ষর করে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। খবর দিয়েছে মিডল ইস্ট আই।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, আমাদের শ্রম বন্ধ রাখার মাধ্যমেই আমরা টাইমসের সেই প্রভাবশালী অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছি, যা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের মিথ্যা প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
বয়কটে অংশ নেওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী রিমা হাসান, সাবেক সেনা-তথ্য ফাঁসকারী চেলসি ম্যানিং, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তালিব, লেখিকা স্যালি রুনি, চলচ্চিত্র নির্মাতা এলিয়া সুলেইমান, পরিবেশকর্মী গ্রেটা থানবার্গ, লেখক ভিয়েত থান নগুয়েন ও সাংবাদিক ডেভ জিরিন।
এছাড়া আরও অনেকে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ক্রিস হেজেস, মার্ক লামন্ট হিল, নুরা এরাকাত, বিজয় প্রসাদ, সুসান আবুলহাওয়া, রশিদ খালিদি, জিয়া টোলেনটিনো ও রবিন ডি.জি. কেলি।
চিঠিতে নিউইয়র্ক টাইমস-এর কাছে তিনটি প্রধান দাবি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত- ফিলিস্তিন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বিরোধী মনোভাব বা বৈষম্য পর্যালোচনার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত ও নতুন সম্পাদকীয় নীতিমালা প্রণয়ন। দ্বিতীয়ত- প্রতিবেদন তৈরিতে নির্ভরযোগ্য উৎস ও উদ্ধৃতি ব্যবহারের নতুন নীতিমালা, শব্দচয়ন নিয়ে আলাদা স্টাইল গাইড, এবং যেসব সাংবাদিক পূর্বে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তাদের প্রতিবেদন লেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা। তৃতীয়ত- ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে প্রকাশিত বিতর্কিত প্রতিবেদন ‘স্ক্রিম উইথাউট ওয়ার্ডস’ প্রত্যাহার করা। প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছিল হামাসের হামলার সময় ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি নারীদের যৌন নির্যাতন করেছে।
এছাড়াও স্বাক্ষরকারীরা টাইমস-এর সম্পাদকীয় বোর্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইসরাইলের ওপর অস্ত্র বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানানোর দাবি করেছেন। লেখকরা উল্লেখ করেছেন, এসব দাবি ‘অসম্ভব বা অযৌক্তিক নয়’- কারণ টাইমস অতীতে এইচআইভি/এইডস সংকট এবং ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের সময় ভুল প্রতিবেদনের জন্য নীতিমালা পরিবর্তন ও প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংবাদপত্র। এর খবর পশ্চিমা গণমাধ্যমে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা শুরুর পর থেকে টাইমস দখলদারের যুদ্ধাপরাধ গোপন, যৌক্তিক ও অস্বীকার করার ভূমিকা পালন করছে।