ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে টানা ১৪ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে পুনরায় চালু হয়েছে রাজশাহী মহানগরীর ৭নং ওয়ার্ডে সরকারের খোলাবাজার (ওএমএস) চাল ও আটা বিক্রয় কার্যক্রম। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছিলেন এলাকার নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রতিটিতে একজন করে মোট ৩০ জন ডিলার ওএমএস পণ্য বিক্রয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিদিন (ছুটির দিন ছাড়া) গড়ে ১.৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ১.০০০ মেট্রিক টন আটা বিক্রি হয় নিম্ন আয়ের জনগণের কাছে। কিন্তু প্রশাসনিক গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে গত ১৪ দিন ধরে ৭নং ওয়ার্ডে এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
সরজমিনে বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয়রা সরকারি এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। উপস্থিত কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “১৪ দিন ধরে সরকারি চাল-আটা বন্ধ। বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, পরিবারের খাবার জোগাড়ই এখন কষ্টকর।”
খাদ্য বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন মোহন আহমেদ। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত। তবে বদলি নীতিমালা ২(গ) অনুযায়ী, নিজ জেলায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা সমমানের পদে পদায়ন নিষিদ্ধ। অথচ তিনি রাজশাহী জেলায়ই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, যা প্রশাসনিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
সূত্রটি আরও জানায়, সাধারণত কোনো জেলার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অনুপস্থিত থাকলে পার্শ্ববর্তী জেলার সিনিয়র কর্মকর্তা সাময়িকভাবে দায়িত্ব নেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেই নিয়ম অনুসরণ না করে নিজ জেলার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা নীতিমালার ব্যত্যয়।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অফিস চলাকালে মোহন আহমেদ প্রায়ই বহিরাগত বন্ধুদের সঙ্গে চা-চক্র ও সৌজন্য সাক্ষাতে সময় ব্যয় করেন, ফলে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ও দক্ষতা ব্যাহত হচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের অধীনে আগামী চার মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সংগ্রহ (প্রোকিউরমেন্ট) কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এই কার্যক্রমে অবস্থান বজায় রাখতে মোহন আহমেদ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে তদবির বা লবিং করছেন বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, তিনি ২০২২ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সময় সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। তার পারিবারিক ঠিকানা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নে, যেখানে তার বাবা মুনসুর রহমান স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহন আহমেদ বলেন, “৭নং ওয়ার্ডের ডিলার সাময়িকভাবে সাসপেন্ড থাকায় বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ ছিল।”
তবে তার এ বক্তব্য ওএমএস নীতিমালা–২০২৪–এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ডিলারশিপ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকলে উপকারভোগীদের সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী বিক্রয়কেন্দ্রের ডিলারের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মোহন আহমেদ আরও বলেন, “আমি ১৩ অক্টোবর থেকে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। ২৫ অক্টোবর আমাদের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল, সেটির দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত থাকায় বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নজরে আনতে পারিনি। পরে ২৭ অক্টোবর থেকে পাশের ডিলারের মাধ্যমে বিক্রয় কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হয়েছে।”
নিজ জেলায় দায়িত্ব পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। স্থায়ীভাবে কাউকে পদায়ন করা হলে আমি এখান থেকে সরে যাবো।”
তবে খাদ্য অধিদপ্তরের বদলি নীতিমালা অনুযায়ী নিজ জেলায় দায়িত্ব পালন না করার নিয়ম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে স্থানীয়দের প্রশ্ন—অসহায় মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখে কতটা মানবিক দায়িত্ব পালন করছে প্রশাসন?
ভুক্তভোগী নাগরিকরা প্রশাসনের কাছে ৭নং ওয়ার্ডের ওএমএস কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা, দায়িত্বহীনতা ও নিয়মবহির্ভূত পদায়নের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।