শিরোনাম
◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আন্দোলন ঠেকাতে দমনপীড়ন, নিন্দা জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ প্রতিবেশী দেশের দালালি করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না: গয়েশ্বর ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ নির্বাচন কমিশন মিথ্যা বলছে: রিজভী ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান ◈ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শেষ, এখন চলবে ফাইজার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ অবসরের পর দুবোন মিলে টুঙ্গিপাড়ায় থাকবো: প্রধানমন্ত্রী (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৯ দুপুর
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১২:৩৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চালের মূল্য বৃদ্ধি : মজুতদারদের অতি মুনাফালোভী মানসিকতা এবং চাতাল মালিকদের ‘কারসাজি’

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী: সম্প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশে চালের বাজার মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রতিদিন যারা বাজার করেন, দিন বা মাসের চাল কেনেন, তারা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেনÑ বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম বেশি। চালের বাজার কিছুতেই যেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এটি গেলো বছরের মাঝামাঝি থেকে এবারেও চলে আসছে। গত বছর বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন ভালো হওয়ার পরেও পর পর কয়েকটি বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংগঠিত হওয়ার কারণে কৃষক আউশ, আমন ধান তেমন ঘরে তুলতে পারেনি। ফলে শুধু বোরো উৎপাদনের ওপর নির্ভর করে ধান-চালের চাহিদা পূরণ করতে পারেনি। চালের দাম লাফিয়ে বেড়েছিলো। সরকারের খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় সময়মতো পরিস্থিতি বুঝতে পারেনি কিংবা চায়নি। ফলে বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি দেখা যায়। এই ঘাটতির পেছনে মজুতদার, চাতালের মালিক এবং মধ্যসত্ত্বভোগীরা অধিক মুনাফা লাভের নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করেছিলো। আমদানিকারকেরাও নানান বাহানা তুলে আমদানি এবংদেশের বাজারের সরবরাহে নানান ধরনের সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফলে গেলো বছর বাজারে চাল নিয়ে চালবাজি বেশ আলোচিত ছিলো।

আমদানি ক্ষেত্রে বিভিন্ন গোষ্ঠী আমদানিকারক বনে যাওয়ার নজির ও স্থাপিত হয়েছে। চাল আমদানিতে তারা আমদানি কর কমিয়ে নেওয়ার যেমন সুযোগ নিয়েছেন তেমনিভাবে অপেশাদার আমদানিকারক সেজে অনেকেই করোনার এই কঠিন সময়ে নিজেদের মুনাফা বাড়িয়ে নিয়েছে। গেলো বছর সরকারের গুদামে প্রচুর চাল মজুত থাকায় সরকার নানানভাবে মানুষকে খাদ্য ও চালের সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলো। এর ফলে চালের মজুদ গুদামে কমে যাওয়ার খবর চাল আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে জানাজানি হওয়ায় বাজার অস্তিতিশীল করা, নিজেদের আখের গুছিয়ে নেওয়া, এমনকি জনমত সরকারের বিরুদ্ধে চাঙা করারও চেষ্টা ছিলো বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সরকারকে সেক্ষেত্রে আমদানিকারকদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েই বিদেশ থেকে চাল আমদানি করার ব্যবস্থা করতে হয়। তারপরও চালের বাজার মানুষ যতোটা আশা করেছিলো ততোটা স্বাভাবিক হয়নি। মোটা চালের ভোক্তারা সবচাইতে দুর্বিপাকে পড়ে।

সরকারি হিসাব মতে, বোরো ধানের উৎপাদন গেলো বছরের চাইতে ১০ থেকে ১২ লাখ টন বেশি হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো বন্যা বা অতিবৃষ্টি র্দীঘায়িত না হওয়ায় দেশের অনেক অঞ্চলেই আউশ ধানের উৎপাদন স্বাভাবিক হবে বলে কৃষকরাও আশা করছেন। আমন প্রস্তুতিও অঞ্চলভেদে ভালো আছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বোরো ধান উৎপাদনের পরও বাজারে ধান-চালের দাম কাক্সিক্ষত স্তরে অবস্থান করছে না। এ নিয়ে সরকারের খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিবিড় কোনো গবেষণা আছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশে এখন কৃষি অর্থনীতিতে যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে তার ফলে কৃষক শ্রেণির মধ্যেও পরিবর্তনের ব্যাপক অবস্থান তৈরি হয়েছে। হতদরিদ্র কৃষকের সংখ্যা এখন এলাকা ও মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ না করে পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত করা সমীচীন হবে না। কেবলমাত্র দরিদ্র কৃষকই ধান কাটার পর নিজের প্রয়োজনীয় ধান গোলায় রেখে উদ্বৃত্ত ধান সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কারণ তার দায় দেনা বেশি থাকে। সে কারণে তাকে ধান কাটার মৌসুমেই ধান বিক্রি করে দিতে হয়। কিন্তু যারা বোরো ধান উৎপাদনকে কেন্দ্র করে এখন বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা সৃষ্টির মাধ্যমে ধান উৎপাদন, সংগ্রহ এবং পেয়ে থাকেন তারা ধান মজুদ করার মাধ্যমে অধিক মুনাফার আশায় থাকে। যখন বাজার দাম বেড়ে যায় তখনই কেবল তারা মজুতকৃত ধান অধিক লাভে বিক্রি করে।

স্থানীয় পর্যায়ের মজুতদাররা এখন পেশাদার মজুতদারে পরিণত হয়েছে। এছাড়া যাদের হাতে অধিক অর্থ রয়েছে তারাও ধান মজুত করে থাকে। ফলে সরকার চাইলেও এখন আর নির্ধারিত মূল্যে চাহিদামতো ধান মাঠ বা বাজার থেকে সরকারি গুদামে তুলে আনার অবস্থানে নেই। এখানেই খাদ্য ও কৃষি অধিদপ্তরের নানা গোষ্ঠী ও নানান ভাবে যুক্ত রয়েছে বলে বোরো উৎপাদন মৌসুমে গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা জানতে পারি। বস্তুত দেশে এখন সরকারের মজুদ বা গুদামকে খালি রাখার মতো নানা গোষ্ঠী দাড়িয়ে গেছে। তারাই ধান মজুদ করার নানা ব্যবস্থাপনা তৈরি করে ফেলেছে। চাতাল মালিকরাও ধান সংগ্রহ, মজুত চাল প্রস্তুতকরণ এবং বাজারে সরবরাহের বিভিন্ন ধরনের অপ্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনা তৈরি করে রেখেছে। ফলে বাজারে কোনোভাবেই ধান কিংবা চালের মূল্য হ্রাস পাওয়ার কোনো সুযোগ এসব গোষ্ঠী সরকারকে দিতে চায় না। বাজার মূল্য প্রতিদিনই তারা ওঠানামার কারসাজিতে দক্ষতা অর্জন করেছেন সেটিকে মোকাবেলা করার সক্ষমতা সরকারের নেই বলেই মনে হয়।

সরকার যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নর্ভর করেছেন তাদের বড় অংশই অর্থ গমনাগমনের সুরঙ্গ পথে অর্থ উপার্জনের নানা বাঁধা বিপত্তি সৃষ্টি করেনি। এটি এখন বোঝার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো গবেষণা সংস্থার দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন নেই। খোলা চোখেই সবকিছু দেখা যায়। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে, চাল উৎপাদনকারী দেশ থেকে এই সময়ে চাল আমদানি করা হলে বাজারে চালের প্রতি কেজি মূল্য ৩৩-৪০ টাকার মধ্যে অবস্থান করবে। কিন্তু আমদানিকারকেরা ইতোমধ্যে আমদানি করের যে হিসাব নজরে এনেছে সেটি কমিয়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ করা হলেও আমদানিকারকরা মোটা চালের বাজার দর উল্লেখিত মূল্যে বাজারে রাখতে সহায়তা করবেন এমন বিশ্বাসযোগ্যতা তারা কয়জন অর্জন করেছেন সেটি প্রশ্ন। যেখানে আমাদের উৎপাদন অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে, সেখানে মোটা চালের প্রয়োজনীয়তা থাকার কথা নয়। গত বছর এতো চাল আমদানি করেও বাজার দর খুব একটা সহনীয় পর্যায়ে আনা যায়নি। প্রতিবেশী ভারত থেকে মোটা চাল আমদানির মূল্য এবং আমাদের বাজার দরের মূল্যের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য ছিলো। এখনও চাহিদার চাইতে অধিক পরিমাণে আমদানির পরও মোটা চালের দাম এই চালের ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে আসবে সে নিশ্চয়তা কোথায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বোধহয় অনেক আগেই চালের অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনা চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিলো। সরকার যে কাজটি করতে পারে তা হচ্ছে বিদেশ থেকে মোটা চাল পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি করে হতদরিদ্র মানুষদের সাহায্য কিংবা করোনার এই সংকটকালে যাদের আয়-উপার্জন কমে গেছে অথবা যারা মোটা চাল কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন তাদের জন্য সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা করা। রিলিফ প্রদান, ওএমএস কর্মসূচিতে চাল সরবরাহ কিংবা টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে চাল ক্রয় করার সুযোগ সৃষ্টি করা। তাহলে চাল নিয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টির সুযোগ স্বাভাবিক নিয়মে কমে আসবে।

পরিচিতি : শিক্ষাবিদ। অনুলিখন : তানিমা শিউলি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়