শিরোনাম
◈ ১৫৬ উপজেলায় ভোট আজ ◈ সংসদ সদস্য আজিমের অবস্থান জেনেছে ভারত পুলিশ ◈ বিধ্বস্ত হওয়ার আগে হেলিকপ্টারে কী করছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ‘শেষ’ ভিডিও ◈ সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়েতে ফাটল, প্লেন চলাচলে বিঘ্ন ◈ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও হামাস প্রধানের বিরুদ্ধে আইসিসিতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন ◈ নিরপরাধ মানুষরাই সরকারি নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন: মির্জা ফখরুল ◈ নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হওয়ায় দুই ওসিকে প্রত্যাহার করলো ইসি  ◈ ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক ◈ ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর শোক ◈ বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বাজার তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১০ মে, ২০২৪, ১২:৫১ রাত
আপডেট : ১০ মে, ২০২৪, ১২:৫১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সবাই সমান সুযোগ পায় না, সবার ভাগ্য সমান হয় না

আরিফ জেবতিক

আরিফ জেবতিক: রাফসান দ্য ছোটভাই অডি গাড়ি কিনে ফেলেছে, কিন্তু একজন তরুণ ডাক্তার এখনও বাসে চড়ে কর্মস্থলে যানÑ এরকম একটি পোস্ট ফেসবুকে সম্প্রতি খুব আলোচিত হয়েছে। আমাদের দুঃখ ও কষ্টের একটা বড় কারণ হচ্ছে অন্যের সাথে নিজেকে নিরন্তর তুলনা করা। অমুক এটা করে ফেলেছে, তমুক সেটা করে ফেলেছে, আমি করতে পারছি না; এই হতাশা আমাদের অহরহ কষ্ট দেয়। আসলে আমাদের প্রত্যেকের সাফল্যের অনেককিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনি কোথায় জন্মেছেন, কোন পরিবেশে বড় হয়েছেন, আপনার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য কতটুকু ছিল, এর সবই আপনার সাফল্য নিয়ন্ত্রণে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

আমাদের অধিকাংশের ব্যাকগ্রাউন্ডই মধ্যবিত্ত টু নিম্নমধ্যবিত্ত। বাপেরা ধুঁকে ধুঁকে সংসার চালান, আপনি পাস করে বের হতে না হতেই বাপ রিটায়ার্ড-মা রোগেশোকে কাতর, ছোট বোনের বিয়ে, ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার ভার, সবই আপনার কাঁধে চেপে বসে থাকে। আমাদের কাঁধে বসে থাকা চাপ তাই সেইফ অপশনগুলো খুঁজতে থাকে। এই যে বিসিএস নিয়ে এত হাইপ, এর বড় কারণ হচ্ছে আমাদের তরুণ সমাজ মরিয়া হয়ে একটা সেইফ রোজগারের সুযোগ খুঁজে। সেটি শুধু তাঁর ভবিষ্যতের জন্য নয়, বরং পেছনে পড়ে থাকা পরিবারকে টেনে তুলে আনারও নিরন্তর ক্ষুধা। আপনি যে পাস করে জীবনটাকে দুই বছর এক্সপ্লোর করবেন, একটা এক্সপেরিমেন্টাল ব্যবসা করবেন কিংবা ধৈর্য্য ধরে দুই বছর কনটেন্ট ক্রিয়েট করে দেখবেন সফলতা পান কী পান না, সেই সৌভাগ্য আমাদের অধিকাংশেরই নেই। 

আমাদের পরিবেশও অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আমার গ্রামের স্কুলে যে ছেলেটা পড়ে, সে একই পরিমাণ মেধা থাকা সত্ত্বেও আমার থেকে পিছিয়ে থাকবে। কারণ শহরের বড় স্কুলে আমি ভালো স্যার পাই, আর্থিক সুবিধা থাকায় ভালো টিউটর পাই, ছোটবেলা থেকে পুষ্টিকর খাবার পাই, পড়ার জন্য একটা আলাদা রুম পাই। আর গ্রামের ছেলেটা, সে হয়তো আমার থেকেও মেধাবী, কিন্তু তাঁকে গরমে ঘেমে স্কুলে যেতে হয়, সেই স্কুলে ভালো শিক্ষক নেই, অন্যান্য রিসোর্স নেই, ভালো একটা নোট যে ধার নেবে, সেরকম কাউকেই সে চিনে না। তাঁর স্ট্রাগল আমার স্ট্রাগলের চাইতে অনেক অনেক বেশি।
সুতরাং যদি জীবনকে এক্সপ্লোর করার অপশন না থাকে তাহলে আপনাকে নিরাপদ রুটেই হাটতে হবে। আপনাকে আপনার সাধ্যমতো সর্বোচ্চ পড়াশোনাটাই করতে হবে। তারপর যে সেক্টরে আপনার শক্তি আছে, সেখানেই মনোযোগ দিতে হবে। আপনার পারিপার্শ্বিকতা আপনাকে একটা জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার পরে আটকে দিবে। ধরুন, ছোটবেলা আপনাকে আপনার পরিবার মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিল। অথচ স্কুলে ভর্তি হলে আপনি হয়তো ঢাকা মেডিকেলে পড়তে পারতেন, বুয়েটে সুযোগ পেতেন। কিন্তু এই না পাওয়ায় আপনার তো হাত নেই। তাই আপনার কাজ হবে মাদ্রাসার পড়াশোনার সুযোগটাই চরমভাবে নেওয়া। তারপর ভালো ও নামজাদা আলেম হওয়া। মানি উইল ফলো ইয়োর সাকসেস। উল্টোপাল্টা তুলনা করাটা অর্থহীন। 

শাকিব খান যখন সিনেমা করতে নামে, সেই ৯৮/৯৯ সালের দিকে আমার তখন এফডিসিতে নিয়মিত যাতায়াত। শাকিব খানের সাথে নাদিম সহ আরো বেশ কিছু নতুন নায়ক এসেছিল সে সময়। শাকিব সাকসেসফুল হয়েছে, বাকিরা কিন্তু বাড়ি ফিরে গেছে। তুলনা তাঁরা নিজেদের মধ্যে করতে পারে, আমার সাথে তাঁদের তুলনা হবে না। ডাক্তারের সাথে ডাক্তারের তুলনা হতে পারে, ইঞ্জিনিয়ারের সাথে ইঞ্জিনিয়ারের, মিস্ত্রির সাথে মিস্ত্রির স্কিলসেটের প্রতিযোগিতা হতে পারে। কিন্তু মিস্ত্রি আর ডাক্তারের মাঝে প্রতিযোগিতার কিছু নেই। দুটো ভিন্ন সেক্টর। ডাক্তাররাও কিন্তু অডি কিনেন, এমন ডাক্তার আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই আছেন। আপনি তরুণ ডাক্তার হিসেবে তাঁদের মতো সফল হওয়ার চেষ্টা করুন। কনটেন্ট ক্রিয়েটর রাফসান অডি কিনেছেন, আবার অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর কিন্তু কয়েক বছর চেষ্টা করে, নিজের ক্যামেরার দামটাও রোজগার করতে পারেননি। মোদ্দাকথা, আপনার নিজের সেক্টরে সফল হওয়ার চেষ্টা করুন। সফল হতে পারলে, সেখান থেকেই আপনার ইপ্সিত আনন্দ আসবে।

আর যদি না পারেন, তাহলেও কষ্ট পাবেন না। যতটুকু পেরেছেন, ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন। বিশ্বাস করুন, সব আমাদের হাতে নেই। যে মেয়েটা নগদ কয়েক কোটি টাকা দিয়ে হার্ভার্ডে পড়তে যেতে পারছে, সে আমার মেয়ের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। আবার যে মেয়েটা হয়তো বাড্ডার একটা সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়ছে, তার তুলনায় আমার মেয়ে, একটা বেসরকারি ভালো স্কুলের ছাত্রী, সে এগিয়ে আছে। এই ৩ জন মেয়ে জন্মথেকে যে সুযোগ সুবিধা পেয়েছে এবং যেগুলো পায়নি, সেটাও বিশাল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। জাস্ট সর্বান্তকরণে চেষ্টা করুন। কিন্তু প্লিজ, তুলনা করতে যাইয়েন না। সবাই সমান সুযোগ পায় না, সবার ভাগ্য সমান হয় না। আপনার শুধু চেষ্টা করার সান্ত্বনাটুকুই প্রাপ্য। অন্যের সাথে তুলনা করতে গেলে জীবনে কখনোই শান্তি পাবেন না, কেউ না কেউ সবসময় আপনার থেকে এগিয়ে ছিল, এগিয়েই থাকবে। লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়