মুযনিবীন নাইম: [২] মানবসেবার আড়ালে সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় সাভারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ এর কর্মচারী ও আশ্রিতরা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের দাবি, আশ্রমের পাশের এক ব্যক্তির সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরেই তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এমন ঘটনায় হতবিহ্বল এলাকাবাসীও চাইছেন সুষ্ঠু তদন্ত।
[৩] সম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর বাহেরটেক গ্রামে ৬৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের প্রতিষ্ঠান ঘুরে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তেমন কোনো সত্যতা মেলেনি।
[৪] সদ্য উদ্বোধন হওয়া ছয়তলা ভবনের প্রত্যেক তলার কক্ষেই এ সময় আশ্রিতদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। নিচতলার কক্ষগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে স্টাফদের অফিস কক্ষ হিসেবে। আর দ্বিতীয় তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত কক্ষগুলোতে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও প্রতিবন্ধীসহ ছিন্নমূল শিশুদের বসবাস। সেখানে অপারেশন থিয়েটারের কোনো সন্ধান মেলেনি। তবে আশ্রমের পিছনে থাকা নিজস্ব কবরস্থানে বেশ কিছু লাশ দাফন করার সত্যতা মিলেছে।
[৫] আশ্রিতরা জানান, প্রতিদিন সময়মতোই তিনবেলা তাদের বিনামূল্যে খাবার পরিবেশনসহ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। তবে কিছুদিন হলো, তাদের আশ্রয় দেওয়া মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠার পর থেকে ভালো যাচ্ছে না তাদের দিনকাল। তাই আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।
[৬] আশ্রমের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব দেলোয়ার হোসেন নামে আশ্রমের এক বৃদ্ধ বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এই আশ্রমে আছি। ২-৩ মাস আগে আমাদের ঢাকার আশ্রম থেকে সাভারের এই নতুন ভবনে নিয়ে এসেছে। এখানে অনেক খোলামেলা পরিবেশ। খুব ভালোভাবে আমরা এখানে আছি। অথচ আমার সন্তানরা আমাকে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমাকে উদ্ধার করে মিল্টন বাবা আশ্রয় দিয়েছেন। সেবা, ওষুধ দিয়ে আমাকে সুস্থ করেছেন। আমার কোনো সমস্যা নেই। এক বেলা গরুর মাংস, আরেক বেলা মাছ ও শাকসবজি খাই। যারা মিল্টনের নামে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। আমরা এটার সঠিক তদন্ত চাই।’
[৭] আশ্রমের পার্শ্ববর্তী শামাইর এলাকার বাসিন্দা সাহেব আলী বলেন, ‘এখানে আগে ঘন জঙ্গল ছিল। লোকজনের তেমন আনাগোনা ছিল না। মিল্টন সমাদ্দার জমি কিনে এখানে আশ্রম তৈরি করার পর মাঝেমধ্যে লোকজন আসে। মিল্টনের জমির পিছনেই ২৫-৩০ বছর আগে ঢাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন চৌধুরী নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ৭২ শতাংশ জমি কিনেছেন। মূলত ঈদের আগে মিল্টনের সঙ্গে ওই জমি নিয়েই গণ্ডগোল হয়েছিল। তখন শামসুদ্দিনের সঙ্গে মিল্টনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা আশ্রমে বসে মীমাংসাও হয়েছিল শুনেছি। এরপর হঠাৎ কিছুদিন ধরে শুনছি, মিল্টনের আশ্রমের লোকজনের নাকি কিডনি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে বিক্রি করা হয়। আমরা এলাকাবাসী কখনো এ রকম কিছু এখানে দেখিনি। কারণ আশ্রমের লোকজন সেখানে থাকা বৃদ্ধ ও শিশুদের মল পর্যন্ত পরিষ্কার করে দেন। এরকম কিছু হলে আমরা এলাকাবাসী কিছু হলেও জানতাম।’
[৮] তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ধারণা জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরেই নানা ধরনের অপপ্রচার শুরু হয়েছে। তবে যাই হোক, আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ও সত্য ঘটনাটা জানতে চাই।’
[৯] প্রতিষ্ঠানটির সুপারভাইজার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের আশ্রমের পেছনে শামসুদ্দিন চৌধুরী নামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির জমি রয়েছে। তার জমিতে যাওয়ার জন্য রাস্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু মিল্টন দাদা আমাদের জমি থেকে ৬ ফুট রাস্তা ছেড়েছেন। কিন্তু ওই মালিকের দাবি, তাকে ১২ ফুট রাস্তা দিতে হবে তার প্লটে যাওয়ার জন্য। এটাকে কেন্দ্র করেই মূলত আমাদের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। ঈদের আগে শামসুদ্দিন চৌধুরী সাভারের আশ্রমে এসে মিল্টন দাদার সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে প্রথমে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে মিল্টন দাদাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে আমরা এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করি। পরে বিষয়টি শামসুদ্দিন চৌধুরী ও তার স্বজনরা আমাদের আশ্রমে বসেই মীমাংসা করেছেন। এ ঘটনার জন্য ওই সময় তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ঈদের পর হঠাৎ শুনি তিনি প্রভাব খাটিয়ে মিল্টন দাদা ও আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন।’ সম্পাদনা: সমর চক্রবর্র্র্তী
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :