মোহাম্মদ রুবেল: কোনো এক সময় গ্রামে তাবিজ আর পানি পড়ার প্রচলন ছিলো। ঝাঁড় -ফুঁক দেওয়া, কাইতনে গিট্টু দিয়ে গলায় অথবা কোমরে লাগানো, তেলপড়া ইত্যাদি দেখেছি নিজের চোখে। এমনকি গর্ভবতী মায়েদের প্রসবকালীন ব্যাথা নাশের জন্য পানি কিংবা তেল মালিশের ওপর বিশ্বাস ছিলো অগাধ ভাবে। জ্বর-সর্দি-বসন্তের চিকিৎসায় দরবেশ সাহেবদের দরবারে লাইন ছিলো অনেক লম্বা। ভূতে ধরা, জ্বিনের আছর করা, বোবা ভূতের নজর হতে রক্ষা করার চিকিৎসা দেখেছি খুব ভয়ে ভয়ে। তারপর বুড়ো-বুড়িদের গিরায় ধরা, কমরে ব্যাথা নতুবা সর্বাঙ্গে মেজ মেজ করার চিকিৎসায় দরবেশদের তেলেসমাতি রিতিমত অবাক করার মতো ছিলো। আর বেদেনীদের সিঙ্গার কথা নাই বা বল্লাম। কালক্রমে এগুলো না থাকলেও ব্যবসায়ের ধরণ বদলে গেছে এখন। আধুনিকতার এই চরম উৎকর্ষের সময়ে দরবেশদের মুখের দাঁড়ির পরিমাণ খাঁটো হয়েছে, পাঞ্জাবির ওপরে কুটির প্রচলন হয়েছে। আর চারদিকের হাওয়া বদল হলে ওনাদের পরির্তন হলে বা দোষ কোথায়। দরবেশদের পরবর্তী প্রজন্ম পানি পড়া তেল পড়ায় না গিয়ে আস্তানা ভিত্তিক ব্যাবসায় শুরু করলো। তারা তাদের নামের সাথে জায়গার নাম জুড়ে দিলো বিশেষণ হিসেবে। যেমন, অমুক বিন হাটহাজারী, তমুক আল পাহাড়পুরী, ছমুক শাহ দরিয়াবাদী ইত্যাদি। এই ধর্মের ব্যাপারীগণ একেক জন একেক ব্যাবসা সেন্টার খুলে বসলো। নিজেদের পীর-মুরিদ বাড়ানোর প্রতিযোগীতায় মাঝে মাঝে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। একে অপর কে কাফের, ইহুদিদের দালাল কিংবা সরকারের দালাল বলতেও এরা কার্পন্য করে না।পানির স্রোতের মতো এরা টাকা কামিয়ে যাচ্ছে।
পরিবহন থেকে শুরু করে আবাসন ব্যবসায় পর্যন্ত এদের নখদর্পনে। মানুষের মন এরা এতোই দখলে নিলো পুরো সমাজ ব্যবস্থায় অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেলো। রাজনৈতিক নেতারা ভোটের রাজনৈতিক খেলায় এই ধর্মবণিকদের পা চাটতে লাগলো অবিরাম ভাবে। পীর ফকির ব্যাবসায়ও পরিবর্তনের হাওয়া লাগলো। তারা তাদের পয়দাকৃত ছেলেদের কে পাঠালো আল- আজহার কিংবা মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে পড়ার পাঠ চুকিয়ে তারা পাশ্চিমা ধাঁচে নিজেকে রুপ দিলো মর্ডান হুজুর হিসেবে। নামের পিছনে তারা যুক্ত করলো মাদানী কিংবা আজহারী বিশেষণ।পৃথিবীর কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছাত্রের নামের পিছনে লাগানো হয়, এমন নজির আমার জানা নেই। যেমন : মাওলানা অমুক বিন মাদানী। তমুক বিন আজহারী। কেউ কি বলতে পারবে ক্যামব্রিজে পড়া কোনো ছাত্রের নামের পিছনে লাগানো হয়েছে। ড. তমুক উদ্দীন ক্যামব্রীজি। কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রের নামের পিছনে লাগানো হয়েছে, অমুক আহমদ ঢাক্কি। বংশ পরম্পরায় ফিতরা জাকাত খাইতে খাইতে এই জাতীয় ভন্ড নব্য লালসালু মজিদগুলো ইসলাম ধর্মের বারোটা বাজিয়ে যাচ্ছে। এদের ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে আরেক শ্রেণির মতলব বাজেরা, যারা আল্লাহ কে ছাড়তে রাজি আছে কিন্তু আল্লাহর মসজিদের নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি না। ফেসবুক থেকে