কামরুল হাসান মামুন : নতুন বছরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে উৎসবের সঙ্গে বই দেয়ার সময় আসলে আমার কেবল ছোটবেলায় দেখা রেশনের চাল, চিনি, তেল, ডাল, ডালডা এমনকি জামা বানানোর কাপড়ের কথা মনে পড়ে যায়। এগুলো কম দামে পাওয়া যেতো। মানুষের হাতে রেশন কার্ড থাকতো সেই কার্ড দেখিয়ে এসব পণ্য দেয়া হতো। অথচ এসব পণ্যগুলো এতো নি¤œমানের ছিলো যে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একদম একই কথা খাটে বিনা মূল্যের বইয়ের ক্ষত্রে। আমার মেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে তাই তাদের কেবল একটি বই-ই ন্যাশনাল কারিক্যুলামের পাঠ্যবই পড়তে হয়েছে সেটি হলো বাংলা বই। আমার ছোট মেয়ে মাত্র সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উঠলো।
সপ্তমশ্রেণিতে সে ‘সপ্তবর্ণা’ শিরোনামে বোর্ডের বইটি পড়েছে। ওই শ্রেণিতে যতোগুলো বই ছিলো তার মধ্যে এই বইটির মলাট, প্রচ্ছদ, বইয়ের কাগজ, ছাপা ও ভেতরের ছবি ইত্যাদি সব দিক থেকে মান খুবই খারাপ। বিনামূল্যে দেবেন বলে এতো খারাপ বই ছাপাবেন? এই বয়সের বাচ্চাদের কথা ভেবে একটু উন্নতমানের বই বানানো যেতো না? এ ছাড়া বইয়ের গল্প ও কবিতা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমি খুব একটা যতের ছাপ পাইনি। সর্বত্র অবহেলা আর অযতেœর ছাপ স্পষ্ট। যেন সেই রেশনের মাল।
এভাবে বিনামূল্যে বই না দিয়ে কেবল অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েদের বৃত্তি দিলে বেশি ভালো হতো। এই বই ছাপানোর প্রজেক্টের মাধ্যমে কতো মানুষ যে মারিংকাটিং করে টাকা কামিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কারা ছাপাবার কাজ পাবে, কারা কাগজ কেনার কাজ পাবে, কারা কনটেন্ট নির্বাচনের কমিটিতে স্থান পাবে এসব কিছুর মধ্যেই রাজনীতি। বই খুললেই বই সংকলন, রচনা ও সম্পাদনায় যারা ছিলেন তাদের নাম। ১০৪ পৃষ্ঠা বইয়ের জন্য ১০ জনের নাম ওখানে। এতোজন থাকলে সবাই এমন ভাব দেখায় যা প্রকৃত অর্থে যেন কারও উপরে দায়িত্ব নেই। এই কমিটিতে যারা ছিলেন আমার ধারণা তাদের কারও ছেলেমেয়ে বাংলা মাধ্যমে পড়ে না। এই গরিব শ্রেণির ছেলেমেয়েদের বই তাও আবার বিনামূল্যে রেশনের বই। এভাবেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আমরা অঙ্কুরেই নষ্ট করে দিচ্ছি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :