দুবাইয়ের রাজপরিবারের এক সদস্যের সাবেক স্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। কারণ তার সাবেক স্বামী স্থানীয় পুলিশে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাতে তিনি তাদের তিন কনিষ্ঠ কন্যাকে অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, ২০১৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে জয়নব জাভাদলি তার সাবেক স্বামী শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে সন্তানের কাস্টডি বা হেফাজত নিয়ে তীব্র এক লড়াইযে জড়িয়ে আছেন। দুবাইয়ের শাসকের ভাগ্নে এই শেখ সাঈদ বিন মাকতুম বিন রশিদ আল মাকতুম। কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
এ সময়ে সন্তানদের কয়েকবার তাদের পিতামাতার মধ্যে হাতবদল করা হয়েছে এবং প্রত্যেকেই একে অপরকে অপহরণের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। জাভাদলি অনলাইন অপরাধ (ই-ক্রাইম) এর অভিযোগেও সম্ভাব্যভাবে গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে পারেন। কারণ তিনি সর্বশেষ মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাটি লাইভস্ট্রিম করেন। সর্বসমক্ষে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, তিনি একটি বড় ঝুঁকি নিচ্ছেন।
বৃটিশ আইনজীবী ডেভিড হেইগকে পাঠানো ভিডিও বার্তায় জয়নব বলেন, আমি জানতাম এটি আমার বাচ্চাদের সঙ্গে থাকার শেষ সুযোগ। কারণ তারা আর আমাকে তাদের দেখতে দেবে না। আমি সত্যিই বিশ্বাস করেছিলাম এটি আমার শেষ সুযোগ। তাই আমি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন করেছি। জয়নব জাভাদলি তখন দুবাইয়ে তার বাড়ি থেকে কথা বলেন। দাবি করেন তিনি এবং তার তিন মেয়ে আবারও প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।
এর আগে পর্যন্ত একটি চুক্তির ভিত্তিতে জয়নব জাভাদলি কার্যত শিশুদের নিজের হেফাজতেই রেখেছিলেন। তার দাবি অনুযায়ী দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম ২০২২ সালে ওই চুক্তি অনুমোদন করেন। চুক্তি অনুযায়ী, তিনি সন্তানদের তাদের ১৮ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নিজের কাছে হেফাজতে রাখার নিশ্চয়তা পান। পাশাপাশি একটি বাড়ি এবং অন্যান্য সহায়তাও পান। সন্তানদের স্কুলের খরচ বহন করে আসছেন তাদের পিতা। ডেভিড হেইগ বলেন, এর বিনিময়ে তাকে কিছু নথিতে স্বাক্ষর করতে হয়। এর মধ্যে ছিল- তার পরিস্থিতি নিয়ে আর গণমাধ্যমে কথা বলবেন না এবং আর কোনো লাইভস্ট্রিম করবেন না।
পরবর্তী আদালতের রায়ে সন্তানদের হেফাজত দেয়া হয় শেখ সাঈদকে। কিন্তু জয়নব জাভাদলি বলেন, তিনি তার মামলায় জড়িতদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছিলেন যে শাসকের সঙ্গে তার চুক্তি এতে প্রভাবিত হবে না। সে অবস্থাই চলছিল দুই মাস আগে পর্যন্ত।
সেটি ছিল তখন সন্তানদের শেখ সাঈদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাতের একদিন- যখন জয়নব জাভাদলি বলেন, দুবাই পুলিশের মাধ্যমে তিনি তার সাবেক স্বামীর কাছ থেকে বার্তা পান যে অপেক্ষার দরকার নেই, সেদিন সন্তানরা আর তার কাছে ফিরবে না। তিনি কয়েক সপ্তাহ তাদের সম্পর্কে কোনো খবর পাননি। শেষ পর্যন্ত তাকে একটি শিশু সুরক্ষা কেন্দ্রে তিন ঘণ্টার সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয় এবং ৮ নভেম্বর তিনি তার ড্রাইভারসহ সেখানে যান। তিনি বলেন, যখন তিনি ভবনে প্রবেশ করেন, তখন তার সন্তানরা সেখানে ছিল না। কিন্তু বেরিয়ে আসার সময় তিনি তাদের দেখেন।
তিনি বলেন, তারা তার দিকে ছুটে আসে। তিনি জানান, তারা চিৎকার করছিল-‘মা মা, আমাদের এখান থেকে নিয়ে যাও!’ তিনি ড্রাইভারকে দরজা লক করে গাড়ি চালাতে বলেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, তাদের পথ তার সাবেক স্বামীর লোকজনের গাড়ি দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়। তখনই তিনি লাইভস্ট্রিম খুলে সাহায্যের আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন। এই কাজের মাধ্যমে তিনি জানতেন যে তিনি আমিরাত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করা চুক্তি ভঙ্গ করছেন এবং গ্রেফতারের ঝুঁকিতে পড়ছেন। কিন্তু তার দাবি, এটিই ছিল তার একমাত্র উপায়।