লিভার ক্যান্সারকে কেন ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়, জানেন? কারণ রোগটি শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে ছায়ার মতো বাড়তে থাকে আর প্রথম ধাপেই কোনো জোরালো উপসর্গ প্রায় থাকে না। অনেকেই ভাবেন, শুধু খাবারে অনাগ্রহই লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত। কিন্তু চিকিৎসা-বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা: মারাত্মক এই রোগ শরীরকে আগে জানায় খুব সূক্ষ্ম, প্রায় অদৃশ্য কিছু ইঙ্গিত দিয়ে যেগুলো অসতর্ক চোখে সহজেই বাদ পড়ে যায়।
সবচেয়ে প্রচলিত লিভার ক্যান্সারের ধরন হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা। দীর্ঘদিনের হেপাটাইটিস বি বা সি, অতিরিক্ত মদ্যপান, ফ্যাটি লিভার সিরোসিস, স্থূলতা বা বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা রোগটিকে আরও ভয়ংকর করে তোলে। তবে সুখবর হলো প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে পারলে শল্যচিকিৎসা, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা আধুনিক টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
নীচে এমন পাঁচটি সতর্ক সংকেত তুলে ধরা হলো, যেগুলো অবহেলা করা মানে ঝুঁকিকে আমন্ত্রণ জানানো
১. পেটের উপরের ডান দিকে অস্বস্তি
লিভার ঠিক যেখানে থাকে, সেই অংশেই অনেক রোগী প্রথমে চাপধরা ব্যথা বা অস্বস্তি টের পান। হালকা ব্যথা বা গ্যাস মনে করে অনেকেই বিষয়টি পাত্তা দেন না এটাই বড় ভুল।
২. কারণহীন হালকা জ্বর
কোনো সংক্রমণ নেই, তবু মাঝেমধ্যে জ্বর আসছে এটি লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রক্ত পরীক্ষা বা লিভার ফাংশন টেস্ট জরুরি।
৩. মূত্র বা মলের রঙের অস্বাভাবিক পরিবর্তন
গাঢ় রঙের মূত্র, খুব ফ্যাকাসে বা সাদা রঙের মল এগুলো লিভারের পিত্ত নিঃসরণে সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও এই পরিবর্তন দেখা দিতে পারে।
৪. বিশ্রামেও দূর না হওয়া ক্লান্তি
লিভারের প্রধান ভূমিকা হলো বিপাক নিয়ন্ত্রণ ও শরীরকে বিষমুক্ত রাখা। লিভারের কার্যক্ষমতা কমে গেলে শক্তি উৎপাদন ব্যাহত হয়, আর তার ফলেই দেখা দেয় স্থায়ী ক্লান্তি যা বিশ্রামেও কমে না।
৫. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা খাবারের প্রতি অনাগ্রহ
হালকা হলেও অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস বা খাবার খেতে অনীহা লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। কারণহীন এই পরিবর্তন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
সতর্কতার মূলমন্ত্র
লিভার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে সহজেই অন্য সাধারণ অসুস্থতার সঙ্গে মিলে যায়। তাই ক্লান্তি, রঙের পরিবর্তন, পেটের অস্বস্তি এমন কোনো উপসর্গ অব্যাহত থাকলে অযথা দেরি করবেন না। প্রয়োজন হলে ইমেজিং টেস্ট, রক্ত পরীক্ষা বা লিভার বায়োপসি রোগ শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
যাদের পূর্ব থেকেই ঝুঁকি বেশি হেপাটাইটিস ইতিহাস, সিরোসিস, মদ্যপান বা স্থূলতা তাদের জন্য সচেতনতা ও সময়মতো পরীক্ষা হওয়াই জীবন বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সূত্র: জনকণ্ঠ