বাংলাদেশে জমি কেনাবেচা ও মালিকানা যাচাই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষ নানান ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে। জমি কিনতে গিয়ে হয়রানি, জালিয়াতি কিংবা ক্ষমতাবানদের চাপে নিজের বৈধ জমি হারানোর মতো ঘটনাও নতুন নয়। তবে এবার এই হয়রানির অবসান হতে যাচ্ছে। ভূমির প্রকৃত মালিকদের জন্য আসছে বড় সুখবর—ডিজিটাল রূপে সংরক্ষণ করা হচ্ছে দেশের সব জমির দলিল।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের অংশ হিসেবে এনালগ পদ্ধতিকে বিদায় জানিয়ে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা হচ্ছে দেশের সমস্ত জমির দলিল। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে দেখা যাবে নিজের জমির দলিল, যাচাই করা যাবে এর সত্যতা। এতদিন দলিল অনলাইনে না থাকায় বিভিন্ন দালাল ও জালিয়াত চক্র ভুয়া মালিক সেজে জমির প্রকৃত মালিককে ঠকিয়ে অন্যের কাছে জমি বিক্রি করত। এসব জালিয়াতি ঠেকাতেই শুরু করা হয়েছে সর্বাত্মক ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম।
১৯০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১১৭ বছরের সব রেজিস্ট্রি দলিল স্ক্যান করে একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন ডাটাবেইসে সংরক্ষণ করা হবে। তবে যুদ্ধকালীন অস্থিরতার কারণে ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের অনেক দলিল হারিয়ে গেছে, সেগুলো অনলাইনে আনা সম্ভব হবে না। যাদের কাছে ওই সময়কার দলিলের কপি আছে, তাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কপি জমা দিয়ে অনলাইনে যুক্ত করার জন্য আবেদন করতে হবে।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু হলে দেশে বা বিদেশে বসেই মালিকরা নিজের জমির দলিলের সব তথ্য অনলাইনে দেখতে পারবেন। নির্দিষ্ট সরকারি ফি পরিশোধ করে ওয়েবসাইট থেকে মোবাইলে ডাউনলোড করতে পারবেন জমির সার্টিফাইড কপি। বাস্তবায়ন শেষে একটি সরকারি ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করা হবে, যেখানে দলিল খোঁজা, যাচাই এবং ডাউনলোড করা যাবে। এমনকি কোনো কারণে মূল দলিল হারিয়ে গেলেও এই অনলাইন কপি আইনগতভাবে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
আইনজীবীরা জানান, আগে রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল খুঁজে বের করতে ঘুষ দিতে হতো ১,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত, যদিও সরকারি নির্ধারিত ফি মাত্র ২০ টাকা। ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে এই ঘুষ ও হয়রানির অবসান ঘটবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জমির মালিকদের কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন—সিস্টেম পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, অনলাইনে অনুপস্থিত দলিল থাকলে নিজে থেকেই কপি জমা দিতে হবে, এবং মনে রাখতে হবে—জাল দলিলকে কোনো অবস্থাতেই অনলাইন সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
সূত্র: জনকণ্ঠ