ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধ এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থাপিত ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদন পেয়েছে। সোমবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে এই প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়। এই প্রস্তাবে গাজাকে নিরাপদ রাখতে 'ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স' (আইএসএফ) নামে একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী হিসেবে কাজ করবে। এর প্রধান দায়িত্বগুলো হলো:
যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ: যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তার ওপর নজর রাখা।
নিরাপত্তা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ: গাজাকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা।
প্রশিক্ষণ: ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
মানবিক কার্যক্রম: বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া এবং মানবিক কার্যক্রম চালানো।
সমন্বয়: তাত্ত্বিকভাবে, এই বাহিনী ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে।
হামাসের দায়িত্ব গ্রহণ: আইএসএফ গাজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেই দায়িত্বগুলো নিজেদের হাতে তুলে নেবে, যা ২০০৬ সাল থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পালন করে আসছে।
আইএসএফ বাহিনীতে কারা অংশ নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্পের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, আজারবাইজান ও ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে সেনা পাঠাতে চেয়েছে। এছাড়াও, মিসর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও যোগ দেওয়ার জন্য আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও আরব আমিরাতের সরকারি কর্মকর্তা আনোয়ার গারগাশ আল-জাজিরাকে বলেছেন, তাঁর দেশ এই বাহিনীতে অংশ নেবে না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, বাহিনীটির নেতৃত্ব দিতে পারে মিসর।
অন্যদিকে, গত অক্টোবরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গাজায় সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকার কথা জানালেও, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেয়ন সার তখন বলেছিলেন, গাজার ভূখণ্ডে তুরস্কের সেনাসদস্যদের উপস্থিতি ইসরায়েল মেনে নেবে না।
নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের প্রস্তাবটি ১৩-০ ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবটিতে রাশিয়া ও চীন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। মস্কো ও বেইজিং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, আইএসএফে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বে ঘাটতি রয়েছে এবং গাজার ভবিষ্যতে জাতিসংঘের স্পষ্ট ভূমিকা উল্লেখ করা হয়নি।
এর আগে রাশিয়া গাজা নিয়ে নিজস্ব একটি প্রস্তাব দিলেও তাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের মতো গাজায় অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের কথা বলা হয়নি।
হামাস ট্রাম্পের এই পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। সংগঠনটি বিবৃতিতে বলেছে, এই ভোটাভুটির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকার ওপর একটি আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় হামাসের অস্ত্রহীন হওয়ার বা উপত্যকা ছেড়ে যাওয়ার দুটি বিকল্পের কথা বলা হয়েছে। হামাস শাসন ছাড়তে রাজি হলেও, অস্ত্র ছাড়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তবে ইসরায়েল বেইতেনু পার্টির প্রধান আভিগদোর লিবারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, "জাতিসংঘে যা ঘটেছে, তা ইসরায়েল সরকারের ব্যর্থতার ফল।"