এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মাইনী ও চেঙ্গী নদীর ড্রেজিংয়ে গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ায় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি নদী খননের সুফল পাচ্ছে স্থানীয়রাও। নদী খননের মাটিতে অনাবাদী কৃষি ভরাট হওয়ায় তা সারা বছরই চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মাইনী ও চেঙ্গী পাহাড়ি নদী খনন প্রকল্প ঘিরে নতুন আশার আলো দেখছেন স্থানীয় কৃষকরা। সদর উপজেলার রাজবাড়ি, যুবরাজ কাবারীপাড়া, পল্টন জয়পাড়া, চেঙ্গী ব্রীজ, গঞ্জপাড়া, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডেবাপাড়া, দক্ষিণ গোলাবাড়ি, বটতলী, ফুটবিল, কমলছড়ি, এছাড়া দীঘিনালা উপজেলার মাইনী, হাসেনপুর, পানছড়া, তারাবুনিয়া, বাবুছড়া ও মেরুন ইউনিয়নে কয়েক লাখ মানুষের নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।
এক সময় বৃষ্টি হইলে আতংকিত হয়ে উঠতো খাগড়াছড়ি চেঙ্গি ও মাইনি নদীরের পাড়বাসিরা। পাহাড়ি ঢলে ও নদী ভাঙন ভয়ে থাকতো। এর মধ্যেই নদীর ভাংগনে ঘরবাড়ির হারিয়েছে বহুপরিবার।
খাগড়াছড়ির মাইনী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে উৎপত্তি হয়ে ৯৬ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মিশেছে কাপ্তাই লেকে।
নদীর গভীরতা কম থাকায় চলতি মৌসুমে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ এলাকা চার দফা বন্যায় প্লাবিত হয়। নদীর গভীর ও প্রশস্ততা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদী দুইটি ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর ফলে নদী যেমন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রধান দুটি নদী চেঙ্গী এবং মাইনী খরস্রোতা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অত্যন্ত প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ক্রমান্বয়ে পাহাড় ও নদীভাঙনের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয় এবং বসতবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঝুঁকির মুখে পড়ে। এসব সমস্যা নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে “খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন হতে সংরক্ষণ” প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
প্রকল্পের প্রধান অংশসমূহ: প্রতিরক্ষা মূলক কাজ ১০.৮৫ কিলোমিটার,চেঙ্গী নদী ড্রেজিং ৩৪.৫৫ কিলোমিটার,মাইনী নদী ড্রেজিং ২৩.৩০ কিলোমিটার দীর্ঘদিন পর অনাবাদী জমি চাষের আওতায় আসায় খুশি স্থানীয় কৃষক। অনাবাদী জমিতে নতুন ফসলের স্বপ্ন বুনছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল পারভেজ বলেন, ‘আমরা খুব কষ্টে ছিলাম, নদীটা খুব সরু ছিল। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর জেগে উঠতো। নৌকা চলাচল করতে পারত না। খননের পর থেকে নদীতে পানি বেড়েছে এখন মাছও পাওয়া যাচ্ছে। নৌকা চলাচল করতে পারছে। আমরা যারা কৃষক আছি তারায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছি।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মাইনী নদীতে এবং চেঙ্গী অংশে খনন কাজ শুরু হয়। এরইমধ্যে পুরোদমে মাইনী নদীর ইয়ারাংছড়ি, ভাঙামুড়া ও মাইনীমুখ অংশ খনন কাজ চলছে। তবে পাহাড়ি নদীর মাটিতে ঢলে ভেসে আসা গাছ, পাথরের কারণে ড্রেজিং কাজ ব্যাহত হচ্ছে নদী খননের পাশাপাশি প্রায় ৭০ কিলোমিটার চর অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম পাউবো এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিথুন পোদ্দার বলেন, নদীর ড্রেজিং কাজ শেষ হলে নৌ-চলাচল স্বাভাবিক হবে। স্থানীয় কৃষকও সুবিধা পাবে। এ ছাড়া নদীর বুকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার চর অপসারণ করা হবে। চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে বন্যার মূল কারণ পাহাড়ি ঢল। নদীর ধারণ ক্ষমতার তুলনায় পানি বেশি হলে এবং তা দ্রুত নেমে না গেলে বন্যা হয়। নদীতে ড্রেজিং হওয়ায় পানিধারণ ক্ষমতা বাড়বে এবং ঢলের পানি দ্রুত কমে যাবে।
কাজের গুনগত মানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের গুণগত মান নিয়মিত টাস্কফোর্স কর্তৃক মনিটর করা হয় এবং বুয়েট টেস্টের মাধ্যমে গুণগত মান নিশিচ করা হয়।
প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাইনী ও চেঙ্গী নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ প্রকল্পের অগ্রগতি
প্রতিরক্ষা মূলক কাজ ৩৫ প্যাকেজে ৬৪. % শতাংশ, ৫টি প্যাকেজের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট প্যাকেজের কাজ চলমান।চেংগী নদী ব্রিজ ৪, ২০.৫৪% শতাংশ,২টি প্যাকেজের কাজ চলমান। অবশিষ্ট প্যাকেজের মূল ব্রিজ কাজ সমাপ্ত হলে বাস্তবায়ন করা হবে। মাইনী নদী ব্রিজ ৫ প্যাকেজে, ৪০.৮৮% শতাংশ,৩টি প্যাকেজের কাজ চলমান। অবশিষ্ট প্যাকেজের মূল ব্রিজ কাজ সমাপ্ত হলে বাস্তবায়ন করা হবে।
খনন কাজ সমাপ্ত হলে নদীতে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি বর্ষায় বন্যার প্রকোপ কমে আসবে
তিনি আরও বলেন, নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ নির্মাণকাজ শুষ্ক বা শীত মৌসুমে করা হয়। বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্মাণকাজ করা সম্ভব হয় না।
প্রকল্পের কাজে ধীরগতি কেন জানতে চাইলে,পাউবোর নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন,চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৫ আগস্টের পর স্থানীয় রাজনৈতিক জটিলতা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব ও দ্বন্দ্ব প্রকল্পের কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।এ সমস্যাগুলোর কারণে প্রকল্পের সামগ্রিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ৪/৫ মাস কাজের ধীরগতির হয়ে পড়েছিলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে,চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড পওর (২) নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রধান দুটি নদী চেঙ্গী এবং মাইনী সুরক্ষায় প্রকল্পের কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে। এই প্রকল্প কাজ শেষ হইলে অতি উর্বর আবাদি কৃষি জমিসহ সরকারী-বেসরকারী বহু মূল্যবান স্থাপনা বন্যার কবল হতে রক্ষা পাবে।
এলাকার অধিক বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে, সামাজিক সুরক্ষা বলয় সুদৃঢ়করণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়ন হবে।এতে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।