শিরোনাম
◈ গ্রিসের ক্রিট উপকূলে মাছ ধরার নৌকা থেকে বাংলাদেশিসহ ৫ শতাধিক আশ্রয়প্রার্থী উদ্ধার ◈ প্রবাসীদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো শুরু, যে প্রক্রিয়ায় ভোট দেবেন তারা ◈ বিশ্ব গণমাধ্যমে শহিদ ওসমান হাদির জানাজায় জনস্রোতের খবর ◈ শহীদ হাদির কবর দেখতে মানুষের ভিড়, রাতেও থাকবে পুলিশি প্রহরা ◈ হা‌দির মৃত‌্যু‌তে গ‌র্জে উ‌ঠে‌ছে বাংলা‌দেশ, যৌথবাহিনীর অভিযান আর গানম্যানে কি আইন-শৃঙ্খলা ফিরবে? ◈ প‌শ্চিমব‌ঙ্গে মোদীকে গোব্যাক ব‌লে, বাংলা‌দে‌শি অনুপ্রবেশকারীদের বলে না- অভিযোগ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর  ◈ মৃত্যুর কিছুদিন আগে সাক্ষাৎকারে যেসব কথা বলেছিলেন ওসমান হাদি (ভিডিও) ◈ তফসিলের ২ বিষয়ে সংশোধনী এনে ইসির প্রজ্ঞাপন ◈ হাদি হত্যার বিচার দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, আজকের মতো শাহবাগ কর্মসূচি স্থগিত (ভিডিও) ◈ প্রথম আলো, ডেইলি স্টার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে: রাকসুর ভিপি

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:৫৪ রাত
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০৪ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

হা‌দির মৃত‌্যু‌তে গ‌র্জে উ‌ঠে‌ছে বাংলা‌দেশ, যৌথবাহিনীর অভিযান আর গানম্যানে কি আইন-শৃঙ্খলা ফিরবে?

এল আর বাদল : গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় দিনে দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনা ঘটে। এক সপ্তাহ পর তার মৃত্যুর খবর আসার পর পরই ১৮ই ডিসেম্বর মধ্যরাতে বাংলাদেশের অন্যতম দুই সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া বড় এই দুই ঘটনায় আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গুলির ঘটনার পরপরই ওসমান হাদির হামলাকারীরা ভারতে পালিয়ে গেছে বলে দাবি করছে পুলিশ। তবে তারা কীভাবে আইনশৃ্ঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পালালো এ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন রাজনীতিবিদসহ অনেকেই। --------- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

২০শে ডিসেম্বর ওসমান হাদির জানাজার জায়গা জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকেই ইনকিলাব মঞ্চ ঘোষণা করেছে, হত্যাকারী বা খুনিচক্রের বিষয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটা করা না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে পদত্যাগের আহ্বান ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

গত বৃহস্পতিবার রাতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে একদিন প্রকাশনা বন্ধ রাখতে হয় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে। দুটি প্রতিষ্ঠানই অভিযোগ তুলেছে, হামলাকারীরা আসছে এমন খবর পেয়ে তারা পৌঁছানোর আগেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। তবে সময়মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহায়তা না করা ক্ষতি এড়ানো যায়নি।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার রাতেই ঢাকায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, রাজশাহী-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, সহিংসতা হয়।

হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়া থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ দুটি পত্রিকা অফিসে হামলা এবং অন্যান্য সহিংসতাকে দেশকে অস্থিতিশীল করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং নির্বাচন ঠেকানোর অপচেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজন।

বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো যখন প্রার্থী চূড়ান্ত করা এবং আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেমময় একের পর এক নানা অপরাধমূলক ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, দেশটিতে নির্বাচনের জন্য যে ব্যাপক মাত্রার নিরাপত্তা দরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেটার জন্য কতটা প্রস্তুত?

বাংলাদেশে অপরাধের চিত্র এখন কেমন? 

বাংলাদেশে অপরাধের চিত্র নিয়মিত মনিটরিং করে দেশটির পুলিশ সদর দপ্তর। দেশটির প্রতিটি থানার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে অপরাধের একটি তালিকা আসে সদর দপ্তরে।

যদিও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন বাস্তবে যত অপরাধ ঘটে, তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ থানায় নথিভুক্ত হয় না।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, দেশটিতে বিশেষত গত এক বছরে অপরাধের যে বাড়দি চিত্র তার মূল কারণ চুরি-ডাকাতি এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়া।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটেছে আঠারো হাজার চুয়ান্নটি।

কিন্তু চলতি বছরের প্রথম এগার মাস অর্থাৎ নভেম্বর পর্যন্ত এমন অপরাধ ঘটেছে ১৯ হাজার ৫৫৫টি।

অর্থাৎ একবছরে অপরাধের ঘটনা বেড়েছে দেড় হাজার।

আবার ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর -এই তিন মাসের সঙ্গে চলতি বছরের একই মাসগুলোর অপরাধের তুলনা করলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র দেখা যায়।

তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের ওই তিনটি মাসে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণের মতো অপরাধের ঘটনা চার হাজার ৪০০ টি। কিন্তু চলতি বছরের ওই একই মাসগুলোতে অপরাধ বেড়েছে। যার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৫০টি। অর্থাৎ তিন মাসের তুলনা করলে অপরাধ বেড়েছে এক হাজার ২৫০টি।

ওসমান হাদির ওপর যেদিন গুলির ঘটনা ঘটে, সেদিনই দুইটি জেলা লক্ষ্মীপুর ও পিরোজপুরে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর ১৩ ই ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, যারা আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারা যদি আগ্নেয়াস্ত্র চান, তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে যাওয়া যাদের আগ্নেয়াস্ত্র সরকারের কাছে জমা থাকে, সেগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২' চালু করা হবে বলেও সেদিন জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

সরকার কী করছে? 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখন মূলত কয়েকটি পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে।

এক. ঢাকায় এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বাড়ানো, টহল কার্যক্রম জোরদার করা।

দুই. দ্বিতীয় ধাপে অপারেশন ডেভিল হান্ট নামে যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু করা। এসব অভিযানে ইতোমধ্যেই আটকের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।

তিন. রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান নিয়োগের সুযোগ সহজ করা। সরকার ইতোমধ্যেই এরজন্য নতুন নীতিমালাও জারি করেছে।

এসবের বাইরে নির্বাচনের জন্য পুলিশ সদস্যদের আলাদা প্রশিক্ষণও শুরু করেছে সরকার।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরির্শক (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা ইতোমধ্যেই দেড় লাখ পুলিশ সদস্যের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, "আমাদের মূল ইস্যুই হচ্ছে, কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা অনেকগুলো রিস্ক অ্যাসেসমন্টেও করেছি। একেক আসনে একেকরকম ঝুঁকি। আমরা ঝুঁকি অনুযায়ী বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কীভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।

আর কোনো প্রার্থী যদি মনে করে যে, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়