শিরোনাম
◈ কালকের মধ্যে জুলাই সনদের আদেশ না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় জনস্রোত হবে: ইসলামি ৮ দলের হুঁশিয়ারি ◈ পুঁজিবাজারে বড় ধাক্কা: একীভূত প্রক্রিয়ায় পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন স্থগিত ◈ আমরা সরকারের চালাকি বুঝি, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই: ডা. তাহের ◈ বিএনপিতে যোগদান নিয়ে যা জানালেন স্নিগ্ধ ◈ সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে জামিন দিল হাইকোর্ট ◈ সিরীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানির স্ত্রী রামা দুয়াজি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনায় ◈ জুলাই চার্টার নিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন গভীরতর: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোটের সময়কালেই মূল অচলাবস্থা ◈ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানীতে জামায়াতসহ আট ইসলামি দলের যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু ◈ আলী রীয়াজ নয় মাসে ৮৩ কোটি টাকা খরচ করে পালিয়েছে: মোশাররফ আহমেদ ঠাকুর (ভিডিও) ◈ ডিবি হারুনকে সরাতে শেখ হাসিনার নির্দেশ, দায় চাপালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর: ওবায়দুল কাদের-হারুন অডিও ফাঁস

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:১২ সকাল
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামে ফের গ্যাংওয়ার: বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহত, অভিযুক্ত ছোট সাজ্জাদ গ্রুপ

চট্টগ্রামে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অধিপত্য বিস্তার ও পুরোনো শত্রুতার জেরে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দ্বন্দ্ব আবারও চরমে উঠেছে, যা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার মতো প্রকাশ্য জনসমাগমেও অস্ত্রধারীরা গুলি চালাতে দ্বিধা করছে না।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগকালে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছেন একসময়ের শিবির ক্যাডার ও সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হওয়া আলোচিত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৫)। হামলায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ আরও দুজন আহত হয়েছেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ হাজীপাড়া এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে সরোয়ার হোসেন বাবলাও উপস্থিত ছিলেন। এরশাদ উল্লাহ দোকানপাটে লিফলেট বিলি করার সময় হঠাৎ একদল অস্ত্রধারী তাদের ওপর গুলি চালায়। অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারীদের ব্রাশফায়ারে প্রথমে সরোয়ার হোসেন বাবলার মাথায় গুলি লাগে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে তাকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় পেটে ছররা গুলি লেগে এরশাদ উল্লাহ ও শান্ত নামের আরেক ব্যক্তি আহত হন।

হাসপাতালে মৃত্যু, প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ

রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে দ্রুত নগরের অক্সিজেন এলাকার বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৯টার দিকে সরোয়ার হোসেন বাবলার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম। তিনি জানান, হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক বাবলাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পেটে ছররা গুলি লাগা এরশাদ উল্লাহ আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।

বাবলার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তার স্বজন ও অনুসারীরা ভিড় করেন। তাদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বিএনপির বহু নেতা-কর্মীও সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে একটি তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরের কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

লক্ষ্য ছিলেন বাবলাই, নেপথ্যে পুরোনো শত্রুতা

বাবলার সহযোগীরা এই হত্যার জন্য চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’র অনুগত সন্ত্রাসীদের দায়ী করছেন। তাদের দাবি, ব্রাশফায়ারে মূল হামলা বাবলাকে লক্ষ্য করেই হয়েছিল। চট্টগ্রামে ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে সরোয়ার হোসেন বাবলার পুরোনো দ্বন্দ্ব চলছিল। চলতি বছরের ১৫ মার্চ সাজ্জাদ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে গ্রেপ্তার হন। সাজ্জাদের অনুসারীদের বিশ্বাস, তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার পেছনে সরোয়ারের হাত ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ-অক্সিজেন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণের পুরোনো বিরোধ।

গত কয়েক মাসে একাধিক সাক্ষাৎকারে সরোয়ার হোসেন বাবলা নিজেও দাবি করেছিলেন, ছোট সাজ্জাদ ও তার ছেলেরা তাকে খুন করার চেষ্টা করছে। তিনি ফেসবুকে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্নার হুমকির কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘চন্দনপুরায় আমাকে মারতে গিয়ে জোড়া খুন করেছে ওরা।’

চন্দনপুরা থেকে পতেঙ্গা: একাধিক হামলা

চলতি বছরের ২৯ মার্চ গভীর রাতে নগরের চন্দনপুরা এলাকায় সরোয়ার ও তার অনুসারীদের প্রাইভেটকার লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা। ওই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন বাবলা। কিন্তু তিনি সে দফায় প্রাণে রক্ষা পেলেও ব্রাশফায়ারে নিহত হন সরোয়ারের দুই অনুসারী কক্সবাজারের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং রাঙ্গুনিয়ার বখতেয়ার উদ্দিন মানিক। এর দুই মাসের মাথায় নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় খুন হন আরেক সন্ত্রাসী আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবর (৪৪)। আকবর সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং ওই ঘটনার জন্যও সাজ্জাদের অনুসারীদের দায়ী করা হয়।

পটপরিবর্তনের পরই নতুন মেরুকরণ

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচটি খুনসহ অন্তত ১৮টি মামলার আসামি ছিলেন সরোয়ার হোসেন বাবলা। একসময় বাবলা শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বিদেশে পলাতক বড় সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন। পরে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হলে সরোয়ার নিজেই একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তোলেন। ২০১১ সালে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। ২০১৭ সালে জামিন পেয়ে কাতারে পালিয়ে যান। সেখান থেকে ফিরলে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আবার গ্রেপ্তার হন।

প্রায় চার বছর পর কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই সরোয়ার আবার গ্রেপ্তার হন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান বাবলা।

কারাগার থেকে বিএনপির সঙ্গে সখ্য

জানা গেছে, কারাগারে থাকাকালে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বাবলার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুক্তির পর আসলাম চৌধুরী ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। মাত্র এক মাস আগে বাবলা বিয়ে করেন। সেই বিয়েতে এরশাদ উল্লাহ ও আবু সুফিয়ানসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে বাবলাকে এই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশেও দেখা গেছে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির প্রার্থীর গণসংযোগ করার সময় সেখানে শত শত লোক অংশ নেন। সরোয়ার সেখানে অংশ নিলে সন্ত্রাসী দুটি দলের মধ্যে পূর্ববিরোধের জেরে তাকে গুলি করা হয়।

সূত্র: চট্টগ্রাম প্রতিদিন 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়