২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শেষ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা এবং মন্ত্রীদের মধ্যে দোষারোপের খেলা শুরু হয়েছিল। সেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট চিত্র উঠে এসেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুনুর রশিদের (ডিবি হারুন) এক টেলিফোন কথোপকথনে, যা 'আমার দেশ' প্রকাশ করেছে।
বিরক্তির কারণ: চাওমিন খাইয়ে ছবি প্রকাশ
ফোনালাপটি মূলত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক নেতাকে আটক, তাদের বসিয়ে চাওমিন খাওয়ানো, ছবি তোলা ও তা প্রকাশ করা নিয়ে মতপার্থক্যকে ঘিরে শুরু হয়।
এই বিষয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরক্তি প্রকাশ করেন। ওবায়দুল কাদের এই বিষয়ে ডিবি হারুনকে প্রশ্ন করলে, হারুন তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ, হারুনের দাবি
নিজের কাজের সাফাই গেয়ে ডিবি হারুন বলেন, তিনি যা কিছু করেছেন, তা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে করেছেন। তিনি দাবি করেন, ছয় নেতাকে আটক করার নির্দেশ, তাদের ছবি তোলা এবং তা প্রকাশ করার আইডিয়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছিল।
হারুন আরও জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় প্রতি রাতে পুলিশের আইজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জুলাই আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা করতেন এবং ছয় নেতাকে আটক করা ছিল সেই পরিকল্পনারই অংশ।
বদলি নিয়ে আপত্তি ও কাদেরের জবাব
তবে হারুনের এই দাবি নাকচ করে দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন হারুনের কাজ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন, তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে উপস্থিত থাকলেও হারুনের দাবির পক্ষে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং শেখ হাসিনার নির্দেশের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই হারুনের বদলির ব্যবস্থা করেন।
বদলি হতে চলার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন ডিবি হারুন। তিনি প্রশ্ন করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিলে তার অপরাধ কী? তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করারও দাবি জানা।
উল্লেখ্য, ২৯শে জুলাই আটক হওয়া এই ছয় নেতা—নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবুবাকের মজুমদার, নুসরাত তাবাসসুম ও আসিফ মাহমুদ—পরবর্তীকালে ৩২ ঘণ্টা অনসনের পর পয়লা আগস্ট মুক্তি পান। এই আটকের ঘটনা জুলাই আন্দোলনকে আরও জোরালো করেছিল।