শিরোনাম
◈ জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা হলে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার ◈ আদানির বিদ্যুৎ কিনে দুই বছরে পিডিবির লোকসান প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ◈ আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সারজিও গোরকে প্রধান উপদেষ্টা ◈ নতুন প্রধান বিচারপতি হচ্ছেন জুবায়ের রহমান চৌধুরী ◈ বিএনপির কেনা বুলেটপ্রুফ বাস দেশে পৌঁছেছে, নিবন্ধন পেল তারেক রহমানের হার্ড জিপ ◈ হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্যের জেরে আসামে হাই অ্যালার্ট, সীমান্তে কড়া নজর মুখ্যমন্ত্রীর ◈ মিত্রদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে বিএনপি? ◈ বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর জাল সম্পদ ও অর্থ পাচার মামলায় দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ◈ হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ভাঙচুরে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা সেন্টার বন্ধ ◈ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত

প্রকাশিত : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৩:১১ রাত
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা হলে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার

জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আগামী দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ১২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে অভিঘাত মোকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হলে একই সময়ে বিপুল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও বড় ধাক্কা আসার আশঙ্কা রয়েছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউটের এক নতুন গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় দাঁড়াতে পারে ১২ হাজার ২০১ কোটি মার্কিন ডলারে। বিপরীতে অভিঘাত মোকাবিলা ছাড়া পরিস্থিতিতে এই আয় কমে ৯ হাজার ৫৩৫ কোটি ডলারে সীমিত থাকবে, যা সম্ভাব্য আয়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমার নির্দেশ করে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও ভয়াবহ। অভিঘাত মোকাবিলায় উদ্যোগ নিলে ওই সময়ে রপ্তানি আয় ১ লাখ ৩ হাজার ৮২২ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। কিন্তু অভিঘাত মোকাবিলা না করলে তা নেমে আসতে পারে মাত্র ৩২ হাজার ৮১১ কোটি ডলারে, অর্থাৎ সম্ভাব্য আয়ের প্রায় ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই দশকে ঢাকায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার দিনের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, কর্মঘণ্টা এবং কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার ওপর। ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার সূচক অনুযায়ী ঢাকায় ২০৩০ সালে মাঝারি তাপ চাপ সীমা (৩০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অতিক্রম করতে পারে বছরে ৬৪ দশমিক ৮১ দিন, যা ২০৫০ সালে বেড়ে ১০৪ দশমিক ৪৮ দিনে পৌঁছবে। চট্টগ্রামে এই সংখ্যা ২০৩০ সালে ৫০ দশমিক ১০ দিন এবং ২০৫০ সালে ৮৪ দশমিক ৮৬ দিন হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও বন্যা বৃদ্ধি সরাসরি উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার সূচকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে প্রতি ১ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে গড় উৎপাদন প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০৩০ সালে অভিঘাত মোকাবিলা ব্যবস্থা কার্যকর করা হলে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান থাকবে প্রায় ৪৮ লাখ ৩০ হাজার। তবে অভিঘাত মোকাবিলা ছাড়া এই সংখ্যা কমে ৪৫ লাখ ৮০ হাজারে নেমে আসবে, অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। ২০৫০ সালের জন্য এই ব্যবধান আরও বড় অভিঘাত থাকলে ৬৩ লাখ ১০ হাজার চাকরি থাকলেও, অভিঘাত মোকাবিলা ছাড়া তা নেমে যেতে পারে ৫০ লাখ ৫ হাজারে। এতে প্রায় ১২ লাখ ৭০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ঢাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের তীব্রতা বেড়েছে। ২০০৫-২০০৯ সময়ে যেখানে ভারী বৃষ্টির দিনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার, ২০১৫-২০১৯ সময়ে তা সর্বোচ্চ ৪৬ দশমিক ৫ মিলিমিটারে পৌঁছায় এবং ২০২০-২০২৪ সময়ে গড় দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ২ মিলিমিটারে। বন্যার কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এক শতাব্দীর একবারের নদীবদ্ধ বন্যা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রায় ২৭ শতাংশ উৎপাদন সুবিধা পানির নিচে চলে যেতে পারে।

গবেষণায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমিকদের মধ্যে অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষকরা শিল্পের স্থায়িত্ব রক্ষায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে; জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা ও আধুনিক কুলিং সিস্টেমে বিনিয়োগ, তাপ ও বন্যাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিকে শ্রমিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, পেইড লিভ ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখার অধিকার দেওয়া কোনো শাস্তি বা আয়হানি ছাড়াই, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মাধ্যমে বাধ্যতামূলক মান নির্ধারণ এবং ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের স্বেচ্ছাসেবী মান অনুসরণ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত আগামী দশকগুলোতে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তবে ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে শিল্পটি। অপরদিকে, সময়োপযোগী অভিযোজন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও উৎপাদন সক্ষমতাও রক্ষা করা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় এখন আর বিকল্প নয়, বরং অত্যন্ত জরুরি একটি বাস্তবতা। উৎস: বিডি-প্রতিদিন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়