২০২৩ সালের জুন মাসে আটলান্টিক মহাসাগরের গভীরে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা টাইটান সাবমার্সিবল দুর্ঘটনার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আসল কারণ এতদিন আড়ালে থাকলেও, এবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে এর মূলে ছিল 'ভয়ঙ্কর নির্মাণ ত্রুটি' এবং প্রস্তুতকারী কোম্পানির 'নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করার সংস্কৃতি'।
ডুবোযানটি বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ নিয়ে প্রতিবেদনে যে বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে, তা নিম্নরূপ:
ভয়ঙ্কর নির্মাণ ত্রুটি: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কার্বন ফাইবার ও টাইটেনিয়ামের সংমিশ্রণে তৈরি টাইটান প্রেসার ভেসেলটি পানির নিচে অতিরিক্ত চাপ সহ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। এতে গঠনগত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও কোনো পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা ছাড়াই এটিকে মহাসাগরের অন্ধকার গভীরে পাঠানো হয়।
নিরাপত্তাকে উপেক্ষা: প্রস্তুতকারী কোম্পানি ওশান গেট (OceanGate)-এর নিরাপত্তা সংস্কৃতি ছিল অত্যন্ত ভঙ্গুর। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (যিনি নিজেও সেই ভয়ংকর যাত্রায় ছিলেন)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ, একাধিক সাবেক কর্মী বারবার সতর্ক করার পরও তিনি ডিজাইনের ত্রুটি ও ঝুঁকিগুলো উপেক্ষা করতেন।
বেআইনি যাত্রী পরিবহন: টাইটানের এই দ্বিতীয় সংস্করণটি কোনো আন্তর্জাতিক সনদ ছাড়াই পর্যটকদের নিয়ে চালানো হচ্ছিল। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পরীক্ষামূলক সাবমার্সিবলে যাত্রী বহন করা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু এই ভয়ংকর প্রতারণাটি করা হয় যাত্রীদের নাম বদলে 'মিশন স্পেশালিস্ট' হিসেবে চালিয়ে দিয়ে।
আইনি দুর্বলতা: এত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও কেন অভিযানটি থামানো গেল না, সেই প্রশ্নের উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) জানায়, দুর্ঘটনার সময় বিদ্যমান আইনি কাঠামো ও স্বেচ্ছামূলক নির্দেশিকা যথেষ্ট ছিল না এই অভিযান থামাতে।
নতুন সুপারিশ: ভবিষ্যতে এমন ট্র্যাজেডি এড়াতে NTSB কোস্ট গার্ডকে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করার সুপারিশ করেছে, যাতে সাবমার্সিবল ও প্রেসার ভেসেলগুলোর জন্য স্পষ্ট এবং বাধ্যতামূলক নিয়ম তৈরি করা যায়।
এই ভয়াবহ ট্রাজেডি মহাসাগর অভিযানের নৈতিকতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এটি প্রমাণ করে যে প্রযুক্তির দৌড়ে যাচাই-বাছাই ও সতর্কতাকে অগ্রাহ্য করলে তার পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে। সূত্র: দেশ টিভি নিউজ