মোস্তাফিজার বাবলু, রংপুর: রংপুর অঞ্চলে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর আগে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে ২জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এরপর, নতুন করে আরও ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরের পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা জেলার পীরগাছার ৮জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে ২জন মারা গেছেন। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
পরে, আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে।
আইইডিসিআরের আরেকটি সূত্র জানায়,ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে, এমন ১জন ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন কথাও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দেশে রোগের প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাব নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন বলেন, আমরা পীরগাছার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে ৮ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ২০ জন রোগীর তথ্য আছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত।
তিনি বলেন, সব মিলে ৫০ জন রোগীর তথ্য আমাদের কাছে আছে। কিছুদিন আগে আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম গিয়েছিল, যারা আক্রান্ত, তারা যাতে শঙ্কিত না হন, এ জন্য তাদের সচেতন করতে। সেখানে ১৫-২০ জন রোগীর দেখা হয়েছে, যাদের ৯০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়েছেন।
অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার ২জনের মৃত্যু নিয়ে তানভীর হাসনাত দাবি করেন, মারা যাওয়া ২জনের মেডিকেল রিপোর্ট তারা (আইইসিডিআর) দেখেছেন। এ ২টি মৃত্যু অ্যানথ্রাক্সের কারণে নয়। তবে, উভয়ের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল।
পীরগাছা উপজেলার দেউতি, পূর্ব পারুল, আনন্দী ধনীরামসহ কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ২ মাসে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে।
এদিকে,রংপুর অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ৩হাজারের বেশি পশু জবাই করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না।বিভাগে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার রয়েছে, তবে, কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।
আইন অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে, রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা একসঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। পশুর রোগ ছড়াচ্ছে মানবদেহে।