যৌন নিপীড়নের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈত্রনানন্দ সরস্বতী ওরফে ‘দিল্লি বাবা’। গ্রেপ্তারের পর তাঁর মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ৬২ বছর বয়সী এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে তরুণী ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটগুলোতে তাঁর তরুণীদের অসামাজিক কাজে উৎসাহিত করা এবং শিশুসুলভ সম্বোধনে আবেশপূর্ণ বার্তা পাঠানোর প্রমাণ মিলেছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া চ্যাটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক একটি কথোপকথনে দেখা যায়, চৈত্রনানন্দ এক তরুণীকে ‘দুবাই শেখ’-এর জন্য একজন যৌনসঙ্গী জোগাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ইংরেজিতে কথোপকথনটি নিচে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হলো:
দিল্লি বাবা: একজন দুবাই শেখ সেক্স পার্টনার খুঁজছেন, তোমার কি কোনো ভালো বন্ধু আছে?
ভুক্তভোগী: কেউ নেই।
দিল্লি বাবা: এটা কী করে সম্ভব?
ভুক্তভোগী: আমি জানি না।
দিল্লি বাবা: তোমার কোনো ক্লাসমেট? জুনিয়র?
এ ছাড়া, অন্য চ্যাটগুলোতে ধর্মগুরুকে বিভিন্ন ছাত্রীকে বারবার ‘সুইটি বেবি ডটার ডল’ বা ‘বেবিইইই’ এর মতো শিশুসুলভ শব্দে সম্বোধন করতে দেখা গেছে। তিনি দিনে ও গভীর রাতেও আবেশপূর্ণ বার্তা পাঠাতেন, যেমন—‘বেবি তুমি কোথায়?’ (রাত ১১: ৫৯) এবং ‘গুড মর্নিং বেবি’ (দুপুর ১২: ৪০)। এমনকি, একটি চ্যাটে তিনি এক ছাত্রীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে ঘুমাবে না?’
দিল্লির একটি বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ১৭ জন ছাত্রী এই বাবার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন। গত আগস্টে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর থেকেই চৈত্রনানন্দ পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস বৃন্দাবন, মথুরা ও আগ্রার ছোট হোটেলে গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাত সাড়ে ৩টা নাগাদ আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের সময় তিনি ‘পার্থ সারথি’ ছদ্মনামে একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের হাতে আসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও নথি। তাঁর কাছ থেকে একটি আইপ্যাড ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ফোন দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরা ও হোস্টেলের দৃশ্য দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া, নিজেকে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ‘স্থায়ী রাষ্ট্রদূত’ এবং ব্রিকসের ‘বিশেষ দূত’ দাবি করে তৈরি করা ভুয়া ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়। দুটি পাসপোর্টও পাওয়া গেছে, যেখানে তাঁর জন্মস্থান ও পিতা-মাতার নামসংক্রান্ত তথ্যে অসংগতি রয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ধর্মগুরুর ৮ কোটি রুপির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এফআইআর দায়ের হওয়ার পর তিনি ভুয়া নথি ব্যবহার করে ৫০ লাখ রুপির বেশি অর্থ তুলে নিয়েছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে।
বর্তমানে চৈত্রনানন্দ পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। পুলিশ তাঁর প্রতিষ্ঠানের তিনজন নারী সহযোগীর মুখোমুখি তাঁকে জেরা করবে। এই সহযোগীরা ছাত্রীদের হুমকি দেওয়া এবং আপত্তিকর মেসেজ ডিলিট করতে সাহায্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।