শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৬ সকাল
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০১৯, ০৪:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ছাত্রলীগ তো সব জায়গায়, ছাত্র ইউনিয়ন আর ছাত্রদল কোথায়?

সালেহ্ রনক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে পেছনে ফেলে মূল সংগঠনগুলোর বাইরে গিয়ে নুরকে ভিপি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন, তারা যে হুট করেই তা করেছেন তা নয়। তারা আদর্শচ্যুত হয়েছেন তাও বলা যাবে না। তবে এই প্রথা ভাঙার গল্প, এই নতুনত্ব বিশেষ বার্তা বহন করছে তা বলাই যায়। সময়ের কাছে অপেক্ষা করতে হবে সঠিক না ভুল তার উত্তর পাওয়ার জন্য।
নুরল হক নুর আগামীর নেতা কিনা কিংবা তার মাঝে লুকিয়ে থাকা আগামীর সম্ভাবনাময় তুখোড় নেতা রয়েছে কিনা তা বিচার করার সময় এখনো আসেনি। তবে এবারের ডাকসু নির্বাচনে কোনো ডাকসাইটে প্রার্থী না থাকলেও সবাই মেধাবী ছিলেন। কেউ কোটা আন্দোলন থেকে উঠে এসেছেন, কেউবা দলীয় আস্থা অর্জন করে নেতা হয়েছেন। এর মাঝে নুর আবার ভিপিও হয়ে গেলেন! প্রশ্ন হলো সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা দলীয় প্রার্থীদের বাদ দিয়ে কেন নুরকে ভিপি হিসেবে বেছে নিলেন? শোভন অধিকতর যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও কেন হেরে গেলেন?
গত ১১ মার্চ দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডাকসু মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের কাক্সিক্ষত মঞ্চ। দীর্ঘ বছর নির্বাচনশূন্য থাকার কারণে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের দাবি-দাওয়া জমতে জমতে পাহাড়সম হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো যে লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছিলো তা থেকে তারা ক্রমশই দূরে সরে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া, অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করার কথা থাকলে বাস্তবতা ভিন্ন। কোনো ছাত্র সংগঠনকেই তার দলীয় ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছু করতে দেখা যায় না। এর ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়ে চরম বিপাকে। বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে নানাবিধ সমস্যায় জর্জড়িত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আবাসন সমস্যা, ক্যান্টিনে মানহীন খাবার, পরিবহন সমস্যা কতো কি। কতোগুলো ছাত্র সংগঠন অথচ তাদের হয়ে দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগ নিয়েও কথা বলার কেউ নেই। সবাই ব্যস্ত আখের গোছাতে। কেউ নেতা বন্দনায়, কেউবা টেন্ডারবাজিতে আবার কেউ ব্যস্ত চাঁদাবাজিতে। এসব দেখে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ।
বিগত বছরগুলোতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মুখপাত্র হয়ে ওঠার চেষ্টা কখনোই কেউ করেনি। নুর সেই পদটি পেয়ে যান হঠাৎ করেই। কোটা আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদেরই আন্দোলন ছিলো। সেই আন্দোলনে ছাত্রলীগও ছিলো, নুর ছিলো তাদেরই অংশ। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমতের কারণে ছাত্রলীগ সেই আন্দোলন থেকে সরে আসলেও নুর থেকে যান। হয়তো নুর বেশ সাহসী হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিংবা সুযোগ পেয়ে নেতৃত্বের স্বাদ গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তা যাই হোক, নুর বেশ দক্ষতার সাথে একটি আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কোটা আন্দোলন যৌক্তিক না অযৌক্তিক সে বিশ্লেষণে আজ যাবো না। কোটা আন্দোলন করতে গিয়ে নুর দলের বিপক্ষেই শুধু অবস্থান নেয়নি, মার খেয়েছেন, জেলও খেটেছেন। ফলাফল সরকারের টনক নড়েছে, কোটা পদ্ধতির সংস্কার হয়েছে। আর এরই প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ডাকসু নির্বাচনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ে নুরকে তাদের যোগ্য মুখপাত্র মনে করে ভিপি নির্বাচিত করেছেন।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা মূল সংগঠনগুলোর ওপর তাদের দীর্ঘদিনের রাগ, ক্ষোভ ও বঞ্চনার জবাব দিয়েছেন ভোটের মাধ্যমে। আস্থা হারিয়ে নতুন করে আস্থা রেখেছেন নুরে। নুরের এই শক্ত অবস্থানের পেছনে ছাত্রলীগের ভেতরে লুকিয়ে থাকা শিবিরের ষড়যন্ত্র ও মদদের অবদানও কম নয়। অস্তগামী সূর্যের মতো ছাত্র ইউনিয়ন ও খর্বশক্তির ছাত্রদলের নিষ্প্রভ উপস্থিতিও তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছতে সাহায্য করেছে। যে সুবিধা নুর গত দেড় বছর ধরে পেয়ে এসেছেন এবং দক্ষতার সাথে কাজে লাগিয়েছেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভোট, ছাত্রলীগবিরোধী ও পরাজিত শক্তিদের ভোটও নুরের বাক্সে জমা পড়েছে। এখানেই কৌশলী নুরর সৌভাগ্য ও কৃতিত্ব।
ডাকসুর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই মূলত নুর ডাকসু নির্বাচনের আলোচনায় আসেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা, পরাজিত শক্তিরা নুরে আশ্রয় খুঁজে নেয়। নুরও সেই সুযোগের যথার্থ ব্যবহার করেন। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দী, ছাত্রদলের অনিকরা যখন নুরের পাশে দাঁড়ায়, পিঠ চাপড়ে দেয় তখন আর সমীকরণ বুঝতে বাকি থাকে না। আওয়ামী হাইকমান্ড নুরকে নিজেদের গাছের ফল মনে করে নিজেদের জন্য বিপদ না ভেবে বরং মঙ্গলই মনে করেন। নইলে যে নুর কোটা আন্দোলনের সময় দৌড় খেয়েছেন, মার খেয়েছেন, জেল খেটেছেন সেই নুর একেবারে নির্বিঘেœ নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়েছে তিন মাসও হয়নি। পরাজিত শক্তিরা যেন নানা রকম মেরুকরণের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনে প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে না ওঠে সেদিকে নিশ্চয়ই আওয়ামী হাইকমান্ডের নজর ছিলো। তারা যখন দেখলেন সবাই নুরকে নিয়ে মগ্ন তখন তারা বিরাট কোনো মেরুকরণের সম্ভাবনা থেকে বেঁচে গেলেন, হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু তাদের হিসাবে ছিল না নুর ভিপি হিসেবে জয়লাভ করবেন!
পরাজিত শক্তিরা ভেবেছিল নুরে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবে। কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। ঢাবির সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ডাকসুর সবচেয়ে প্রভাবশালী পদে নুরকে নির্বাচিত করলেও অন্য ফাঁদে পা দেয়নি। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে দূরে সরে যায়নি, ছাত্রলীগকে বর্জন করেনি। ছাত্রলীগ হল সংসদে বেশি সংখ্যায় প্যানেলে বিজয়ী হয়েছে, কয়েকটি হলে স্বতন্ত্ররা বিজয়ী হয়েছে। তার অর্থ তারা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রদলকে বর্জন করেছেন, ভোটের হিসাবে তাদের কোনো অবস্থানই নেই। ভারসাম্যতা রক্ষার নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরকে নির্বাচিত করে ঠিক না ভুল করেছেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নুরকে শিবির বানিয়ে শিবিরকে যারা জাতে তুলছে তারা আর যাই হোক ছাত্রলীগ তথা আওয়ামী লীগের মঙ্গল চায় না। তারা প্রকৃতপক্ষে শিবিরকে ডাকসু নির্বাচনে বড় নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখাতে ব্যস্ত। নুরের বিজয়ে দিশেহারা না হয়ে বরং নিজেদের আত্মশুদ্ধিতে ব্যস্ত হওয়া উচিত। খুঁজে বের করা উচিত কেন আওয়ামী লীগ এর টানা ক্ষমতা ও চারদিকের জয়জয়কারও ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি? কেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নুরে মুগ্ধ হতে হলো? সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সাথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দুর্ব্যবহার, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, দাদাগিরিসুলভ আচরণ নুরের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করেছে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা মন্দের ভালো হিসেবে যোগ্যতায় তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা একজনকে বেছে নিয়েছেন। মন ও মননে যখন সবার সুবিধাবাদের স্লোগান তখন কাউকে শিক্ষা দিতে গিয়ে, কাউকে উপযুক্ত জবাব দিতে গিয়ে, কারো ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে মাঝখান থেকে কেউ সুবিধাভোগ করবেন এটাই স্বাভাবিক। রেজওয়ানুল হক শোভন যতো না হেরেছেন নুরর তারকা তকমার কাছে তার চেয়ে বেশি হেরেছেন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। আর এটা দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ছাত্রলীগের সিন্ডিকেটের আধিপত্যের কারণেই হয়েছে। এবারের কমিটিতে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগে আধিপত্য বিস্তার করে আসা সংগঠনের সাবেক শীর্ষ নেতাদের সিন্ডিকেট তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। উত্তরবঙ্গের ছেলে শোভন সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে এসে ছাত্রলীগের সভাপতি হন। যে কারণে শোভনকে শুরু থেকেই মেনে নিতে পারেননি ছাত্রলীগের সাবেক ওই শীর্ষ নেতারা। এবারের ডাকসু নির্বাচনে তাদের অনুসারীদের দিয়ে শোভনকে হারানোর সব চেষ্টা করেছেন বলেও দাবি করছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা। জল অনেক গড়িয়েছে, তারপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ছাত্র সংগঠনগুলো বিশেষ করে ছাত্রলীগ নুরের এই নতুন শুরুর মধ্য থেকে নতুন করে শিক্ষা নিলেই মঙ্গল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে ডাকসাইটে যতো নাম। স্বাধীনতাপূর্ব ডাকসুর ভিপি ছিলেন রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রবসহ কিংবদন্তিতুল্য সব নাম। স্বাধীন বাংলাদেশে ডাকসুর ভিপি হিসেবে প্রথম নাম লেখান মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তারপর এক এক করে মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও আমানউল্লাহ আমান নির্বাচিত হন। এসব নামের পাশে নুরল হক নুর বড়ই সাদামাটা ও বেমানান। তারপরও নুরের অর্জনকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই আপাতত। যদিও তার দৃঢ়চেতা মনোবল ও ব্যক্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার দাবি রাখে।
যারা ছাত্রলীগকে ঠেকাতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রদলকেও কোনো প্রকার বিবেচনায় না নিয়ে নুরের জয়ে মনের সুখে বগলে তালি বাজাচ্ছেন, তারা নিজেরা যে নাই হয়ে গেছেন তার খবর নেই। একেই বোধহয় বলে ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা’। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে তারা শুভযাত্রায় খানিকটা ছন্দপতন ঘটাতে পারলেও যাত্রা ঠেকাতে পারেনি। নুরর জয়ে শিবির তথা পরাজিত শক্তিরা কিছুটা হাসির রসদ পেলেও তারা মূলত খেটেখুটে ছাত্রলীগের একজন কর্মী বা নেতাকেই জিতিয়েছে। নুরল হক নুর হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলে ছাত্রলীগ হল শাখা কমিটির উপমানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ছিলেন। তাই তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পর্যন্ত যেমন কোনো কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি তেমনি নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরের দিন টিএসসিতে ধাওয়া খেলেও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন কর্তৃক অভিনন্দিত হয়েছেন। গোলাম রাব্বানীও বলেছেন, ‘নুর আমার ছোট ভাইয়ের মতো, আমার সাথে রাজনীতি করতো’। কিছুদিন আগে এক টিভি টকশোতে নিজেকে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে দাবি করেছিলো সেই টকশোতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর নুর তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেন, ‘বিজয় দিবস র‌্যালিতে সংগ্রামী সভাপতি আবিদ আল হাসান ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আপনার মতো নেতার কর্মী হতে পেরে আমরা গর্বিত’।
নুরকে অভিনন্দন জানিয়ে শোভন যেভাবে বরণ করে নিলেন তা শুধু অসাধারণই ছিলো না নতুন কিছুর বার্তাও দিয়েছেন। যা প্রচলিত রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বড়ই বিরল। ভিপি হিসেবে শোভন নির্বাচিত হলে ডাকসুর সৌন্দর্য বাড়তো বৈ কমতো না। এখানেও ছাত্রলীগ তথা দলের হাইকমান্ড যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। নির্বাচনের পূর্ববর্তী মেরুকরণ রুখতে নুরতে যেমন ভয় পায়নি তেমনি নির্বাচন-পরবর্তী মেরুকরণ রুখতে ভিপি ফলাফলের বিপক্ষে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নুর-শোভনের কোলাকুলি, একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার হাইকমান্ডের ইচ্ছারই যে প্রতিফলন তা বোঝার আর বাকি থাকে না ।
আমি আগেই বলেছি নুর মেধাবী শিক্ষার্থী হলেও ডাকসাইটে নেতা হওয়ার যোগ্যতা এখনও অর্জন করেনি। কৌশলী নুর মন মননে সুবিধাবাদ লালন করে নিজের আখের গোছাবেন, নাকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের যোগ্য মুখপাত্র হয়ে উঠবেন তা সময়ই বলে দেবে। শাহবাগ মুভমেন্টের মাধ্যমেও জাতি একজন সম্ভাবনাময় নেতা পেয়েছিলো। কিন্তু তিনি নিজের সীমানা নির্ধারণে ভুল করে হারিয়ে গেছেন। চারদিকের হাততালি, বাহবাতে তার নিজের অবস্থান ভুলে যান। প্রবাদ আছে, ‘সকালের সূর্য বলে দেয় সারাটা দিন কেমন যাবে’। তেমনি নুরও তার কিছুটা ছাপ রেখেছেন ইতোমধ্যে। ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এক দিনে চার রকম কথা বলেছেন। আর তার একেকবার একেক রকম কথায় বদলে যাচ্ছে তার অবস্থান, সৃষ্টি হচ্ছে নানা পরিস্থিতি, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তার ব্যক্তিত্ব। প্রথমে তাদের প্যানেল থেকে জেতা নিজেরটাসহ দুটি পদ বাদে বাকি ২৩টিতে পুনঃনির্বাচন দাবি করেন এবং ঢাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। এরপর ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কোলাকুলি করে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিলে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। এরপর সন্ধ্যায় বাম জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর সবগুলো পদে ৩১ মার্চের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানান। এরই একটু পরে আরেকটি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি নিজে শপথ নেবেন বলে জানান।
যদি ওপরের নানা রকম বক্তব্য তার অদক্ষতার কারণে ঘটে থাকে তাহলে বলার কিছু নেই, সময়ের পরিক্রমায় স্বীয় পদে দক্ষতা আসবে। আর যদি সুবিধাবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে কূটকৌশলের অংশ হয় তাহলে ডাকসুর জন্য অশনিসংকেত। আবার যদি এমন হয় ঘরের ছেলে নুর ঘরে ফিরে গেছেন তাহলে ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রদলের তো কষ্ট লুকানোরও জায়গা থাকবে না। তাদের তখন চিৎকার দিয়ে ‘আমরা কই, আমরা কই’ বলা ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না এবং বাস্তবতা বলছে তাই ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি তা না হয় তাহলে জাতি শাহবাগ মুভমেন্টের মতো আরেকজন নেতা পাবে এবং হারিয়েও যাবে। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়