শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৫ মে, ২০২৪, ০১:১৮ রাত
আপডেট : ০৫ মে, ২০২৪, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানাহেল আল ওতাইবি নারীমুক্তির লড়াইয়ে একজন সাহসী যোদ্ধা 

ইমতিয়াজ মাহমুদ

ইমতিয়াজ মাহমুদ: ছবির এই মেয়েটার নাম মানাহেল আল ওতাইবি। সৌদি আরবের মেয়ে। গত বছর নভেম্বর মাসে এই মেয়েটাকে সৌদি পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে মেয়েটার আর কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিলো না। কে এই মেয়ে? পেশাগতভাবে সে ফিটনেস প্রশিক্ষক- এই বিষয়ে সনদপ্রাপ্ত। শিল্পীও বটে। ওর আরেকটা পরিচয় সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী অধিকার বিষয়ক টুকটাক কথা বলতো। মানাহেল একটা টুইট করেছিলো সৌদি আরবে নারীদের চলাফেরায় অভিভাবকত্ব সংক্রান্ত বিধিবিধানের অবসান চেয়ে। কী এসব বিধিবিধান? সৌদি আরবে আইনি বিধান হচ্ছে যে একজন নারী তাঁর অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোথাও ভ্রমণ করতে পারবে না, কোনো সামাজিক বা দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে পারবে না, কোথাও যেতে পারবে না ইত্যাদি। ২০১৯ সালে ওরা এসব বিধিবিধান কিছু শিথিল করেছে। যেমন ২১ বছরের ওপর হলে একজন নারী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বা ১৮ বছরের উপর হলে জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধনের জন্যে আবেদন করতে পারবে এরকম অল্প কয়েকটা বিধি কিঞ্চিৎ শিথিল হয়েছে। কিন্তু এখনো নানা ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি বা তত্ত্বাবধানের নিয়ম রয়ে গেছে। 

ওই টুইটের পর পুলিশ ওকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর অনেকদিন ওর খবর পাওয়া যায়নি- সে কোথায় আছে কী হয়েছে ওর এইসব কিছুই না। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ নানা রকম সংস্থার অনেক অনুরোধ ও চাপের পর কিছুদিন আগে সৌদি আরব জানিয়েছে যে মানাহেল জেলে আছে, সেখানে সে সাজা খাটছে- ১১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। কীসের সাজা? কবে হলো সাজা? একটা সন্ত্রাসবিরোধি আদালতে গোপনে ওর বিচার হয়েছে। সেই বিচারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অপরাধে মেয়েটার এগারো বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। ঠিক কী ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে মানাহেল? সে টুইট করে অভিভাবকের অনুমতি, তত্ত্বাবধান, কর্তৃত্ব ইত্যাদির অবসান চেয়েছে। এটাই নাকি বিশাল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। শুধু এটাই না। এই বেয়াদব মেয়ে নাকি আবায়া না পরেই এমনিই সাধারণ কাপড় চোপড় পরে মার্কেটে গিয়েছে। বিশাল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এসব অপরাধে এখন সে এগারো বছরের জন্য জেল খাটছে। জানুয়ারি মাসে ওর বিচার আর সাজা হয়েছে, সারা দুনিয়া এই খবরটা জানতে পেরেছে এপ্রিল মাসের তিরিশ তারিখে। 

মানাহেল আল ওতাইবি নারীমুক্তির লড়াইয়ে একজন সাহসী যোদ্ধা। মেয়েটা কেবল নিজের জন্যে ও সৌদি আরবের সকল নারীর জন্যে ন্যায্য অধিকার দাবি করেছে। সে কোনো বোমা ছুড়ে মারেনি, কাউকে গুলি করেনি, কাউকে হত্যা করেনি। এমনকি কোনো বিশাল সভা সমাবেশ না মিটিং মিছিলও করেনি। শুধু টুইট করে বলেছে যে নারীও মানুষ, নারীর জীবনযাপন সকল কর্মকাণ্ড একজন পুরুষ অভিভাবকের অধীনে ও তত্ত্বাবধানে হতে হবে এটা ন্যায় নয়। মানাহেল কেবল এসব অন্যায় কিছু বিধিবিধানের পরিবর্তন চেয়েছে। এটাই নাকি সন্ত্রাস। আমরা মানাহেলের আশু মুক্তি দাবি করি। যে বিচারটা হয়েছে সেটা কোনো বিচারই নয়। গোপন বিচার কেন হবে? এইগুলো হচ্ছে নির্যাতন। এই নির্যাতন থেকে মানাহেলের মুক্তি চাই। আপনাদের সবার প্রতিও অনুরোধ করি, আপনারাও যার যার অবস্থান থেকে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিন যে নারীর অধিকারের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করা কোনো অপরাধ নয়। মানাহেল নিরপরাধ। ওর এক্ষুনি মুক্তি চাই। এবপ্নগ সৌদি আরবের ঐসব পুরনো পঁচা নারী অধিকার বিরোধী পিতৃতান্ত্রিক কালা কানুনের অবসান চাই। নারী মুক্তির লড়াইয়ে সৌদি আরবের মতো জায়গায় বাস করে মানাহেল যতোটুকুই যা করেছে এটা দুনিয়াব্যাপি নারীমুক্তি আন্দোলনের জন্যে একটা উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। সালাম জানাই এই সাহসী মেয়েটিকে। নারীমুক্তির লড়াই একদিন নিশ্চয়ই জয়ী হবে। সারা দুনিয়ার মানুষ মনে রাখবে যে নারীর মুক্তির এই লড়াইয়ে মানালে আল ওতাইবি নামে একজন অসমসাহসী যোদ্ধা কীভাবে লড়েছে। লেখক: আইনজীবী। ৩-৫-২৪। ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়