লেলিন চৌধুরী: মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে কিডনি চুরি ও পাচার নিয়ে বহু কথা প্রচলিত আছে। একজন রোগী যার দুটি কিডনিই পুরোপুরি অকার্যকর তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস হচ্ছে যন্ত্রপাতির সাহায্যে কিডনির কাজ সম্পন্ন করা। সপ্তাহে তিনদিন (কখনো দুইদিন) ডায়ালাইসিস করাতে হয়। কোনো সুস্থ মানুষের একটি কিডনি রোগীর শরীরে লাগিয়ে দিলে বা প্রতিস্থাপন করলে রোগীটি ডায়ালাইসিস ছাড়াই সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। বলা ভালো, একটি কিডনি নিয়েই যেকোনো মানুষ পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। অনেকের দেহে জন্মগতভাবেই একটি কিডনি থাকে। বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দশ শতাংশের মতো দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে ভুগে। তাই প্রতিস্থাপন জন্য বিপুল সংখ্যক কিডনির প্রয়োজন হয়। কিন্তু কিডনিদাতার সংখ্যা খুব কম। তাই কিডনি দান করা নিয়ে নানা ধরনের অপরাধীচক্র গড়ে উঠেছে। মনে রাখতে হবে, ইচ্ছা করলেই কেউ কাউকে কিডনি দিতে পারে না। কিডনিদাতাকে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়-১. কিডনি দাতা ও গ্রহীতার শরীরের কলাতন্তু (টিস্যু)-র ধরনে মিল থাকতে হবে, ২. দাতাকে সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হতে হবে, ৩. দাতাকে একটি বড়ো অপারেশনের ধকল সহ্য করার শারীরিক সামর্থ্য থাকতে হবে।
কিডনি দাতার শরীর থেকে একটি কিডনি সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে বের এনে গ্রহীতার শরীরে দ্রুত প্রতিস্থাপন করা হয়। এজন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতাকে পাশাপাশি অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করা হয়। তবে সঠিক সংরক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে ২৪-৪৮ ঘণ্টা একটি কিডনি সংরক্ষণ করা যায়। দাতার শরীর থেকে কিডনি বের করে আনার পর যতো দ্রুত রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায় প্রতিস্থাপন সফল হওয়ার সম্ভাবনা ততো বেশি থাকে। আলোচনা সংক্ষিপ্ত করে বলা যায়, সাধারণভাবে কিডনি চুরি বা পাচারের ঘটনা বাস্তবসম্মত নয়। কিডনি পাচারচক্রের হোতারা হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর কিছু মানুষকে অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি বিক্রয়ে রাজি করায়। তারপর তাদের টিস্যুর ধরন বা টাইপিং পরীক্ষা করিয়ে লিস্ট তৈরি করে। সম্ভাব্য দাতার শরীরে অসুখবিসুখ থাকলে সেগুলো চিকিৎসা করিয়ে ভালো করে। এরপর যে গ্রহীতার সঙ্গে টিস্যুর ম্যাচিং হয় বা ধরনে মিলে যায় তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে নকল কাগজপত্র তৈরি করে। পুরো ব্যাপারে মোটা অংকের টাকা লেনদেন হয়। এছাড়া কাউকে ধরে জোর করে কিডনি নেওয়া, অথবা কারো শরীর থেকে চুরি করে কিডনি নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করার কোনো কারণ নেই। কেননা পাচার করা বা চুরি করা কিডনি কোনো কাজে আসবে না। লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :