শিরোনাম
◈ বাংলা‌দেশ জিত‌লো তামিমের সেঞ্চুরিতে, সি‌রিজ শেষ হ‌লো সমতায়  ◈ তোপের মুখে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিল পুলিশ (ভিডিও) ◈ ‘ফজু পাগলা’ উপাধি যারা দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই: ফজলুর রহমান ◈ সরকার থেকে পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ ◈ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাতিল হবে ৬ ধরনের দলিল: আসছে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা ◈ আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক: সিইসি নাসির উদ্দিন ◈ 'র' এর মাধ্যমে শিখ নেতাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত অমিত শাহ, চাঞ্চল্যকর তথ্যচিত্র প্রকাশ! (ভিডিও) ◈ জেট ফুয়েলের দাম আরও বাড়ল, বিমান ভাড়া কি বাড়বে? ◈ আ.লীগের বড় পরিকল্পনা ফাঁস, গ্রেপ্তার ২৫ ◈ ১৮ নভেম্বর ‘প্রবাসী ভোটার অ্যাপ’ উদ্বোধন

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৮ দুপুর
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি–জামায়াত : নেতাদের ভিন্ন বক্তব্যে তৃণমূলে হতাশা ও বিভ্রান্তি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট আয়োজন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এরইমধ্যে গণভোট ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা নিয়ে জামায়াত নেতাদের সমন্বয়হীন বক্তব্য সামনে এসেছে। একদিকে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আদায়ে কঠোর আন্দোলনের হুঙ্কার, অন্যদিকে ঐকমত্যে পৌঁছতে বিএনপির সাথে আলোচনা ইস্যুতে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এতে হতাশা ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে নির্বাচনমুখী তৃণমূলের মধ্যে। তবে দলটি সুসংগঠিত হওয়ায় প্রকাশ্যে হতাশার ব্যাপক চিত্র না দেখা গেলেও, কৌশলগত আলোচনায় এই বিষয়গুলো প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।

জামায়াত নেতারা গণভোট নির্বাচনের আগেই চেয়েছেন এবং এই ইস্যুতে তারা বিএনপির সাথে আলোচনায় বসতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। তবে, নির্বাচনের দিন গণভোটের বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকা বিএনপি জামায়াতের এই আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে টেলিফোন করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাব নিয়ে ওই রাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক বসে। বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ নেতা জামায়াতের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, জামায়াতের ডাকে আলোচনায় বসার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অবশ্য এ বিষয়ে সরকার যদি রাজনৈতিক সংলাপের উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিএনপি তাতে অংশ নিতে পারে বলে বৈঠকে কয়েকজন নেতা মত দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত খুব পরিষ্কারভাবে আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। ওটাই আমাদের বক্তব্যে।

এদিকে, গণভোটের সময়সীমা ও পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মধ্যে কিছু সমন্বয়হীন বা ভিন্ন ভিন্ন কৌশলগত বক্তব্য লক্ষ্য করা গেছে। যদিও জামায়াত নেতারা জাতীয় নির্বাচনের অনেক আগেই গণভোট অনুষ্ঠানের দাবিতে অনড়। তবে কখনো কখনো তাদের বক্তব্যে বিএনপির অবস্থানের প্রতি কৌশলগত নরম সুরও দেখা গেছে।

জামায়াতের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও কম বিতর্কিত হিসেবে দেখা হয় দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানকে। তিনি এই ইস্যুতে বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে তা মূল্যহীন।’ তবে যথাসময়ে নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি এও বলেন, ‘সবাইকে নিয়েই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। এটা দেরি হলেই বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

তবে, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ৫ দফা দাবি আদায়ে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। তিনি কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ৫ দাবি না মানলে আগামী ১১ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে। তিনি আরও বলেছেন, ‘গণভোট না হলে জাতীয় নির্বাচন সংকটের মুখে পড়বে।’ তার এই হুঁশিয়ারিকে নির্বাচন বানচালের হুমকি হিসেবে দেখছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, নির্বাচন বানচাল হলে এবং বিএনপির সঙ্গে সংঘাতে জড়ালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলামের নামে রাজনীতি করা দল জামায়াত।

অন্যদিকে, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের কঠোরতম অবস্থান নিয়ে সরকারের প্রতি সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গণভোট অবশ্যই নভেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘চালাকি করে’ গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তিনি এই ধরনের কৌশলকে অবাস্তব ও জটিলতা সৃষ্টিকারী বলে উল্লেখ করেন।

বিএনপিকে ফ্যাসিবাদী ও অকৃতজ্ঞ আখ্যা দিয়ে ডা. তাহের অভিযোগ করেছেন, বিএনপি 'ধোঁকা, প্রতারণা ও অকৃতজ্ঞতার' পরিচয় দিচ্ছে এবং তাদের ভেতরে ভেতরে 'ফ্যাসিস্ট হওয়ার খায়েশ' আছে। তিনি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোটের দাবিকে 'অবাস্তব' বলে অভিহিত করেন। দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে আক্রমণাত্মক ভাষায় তিনি বলেন, ‘‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব। ঘি আমাদের লাগবেই।’’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বিএনপির আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘বিএনপির মহাসচিবকে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু ওনারা বলেছেন, জামায়াতের আহ্বানে তাঁরা সাড়া দেবেন না। বিগত রেজিম কিন্তু এ ধরনের সুর সব সময় বাজাত যে ওমুকের সঙ্গে বসবে না। এই কালচার থেকে কি বের হতে পারি না? বিএনপি যদি আহ্বান করে জামায়াত যাবে এবং অন্যদেরও আহ্বান জানাবে।’

সমালোচকরা বলছেন, জামায়াতের তৃণমূল কর্মীরা সাধারণত কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অত্যন্ত অনুগত থাকেন। তবে তারাও চান দেশে যথাসময়ে নির্বাচন হোক। কিন্তু নেতাদের সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য তাদের মধ্যে হতাশার জন্ম দিয়েছে। দলীয় শীর্ষ নেতারা একদিকে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ বিএনপির মতো অন্যান্য দলের সাথে ঐকমত্যের কথাও বলছেন। এই ভিন্ন সুরের কারণে তৃণমূল কর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন যে, তাদের মূল ফোকাস কঠোর আন্দোলন নাকি আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃণমূলের কর্মীরা যারা একসময় বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করেছে, তারা এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এবং বিএনপির অসহযোগিতামূলক অবস্থান দেখে হতাশ হতে পারেন। তাদের মনে এই প্রশ্ন জাগতে পারে, এখন তারা কি এককভাবে আন্দোলন করবেন, নাকি এখনো কোনো বৃহত্তর জোটের সম্ভাবনা আছে?

শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য যদি এক রকম না হয়, আন্দোলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করতে পারেন কর্মী-সমর্থকরা। এছাড়া, কৌশলগত ভিন্নতাও যদি সুনির্দিষ্ট না হয়, তবে তা তৃণমূলে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে মত তাদের। সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়