রাশিয়া থেকে প্রথমবারের মতো মালবাহী ট্রেনে পণ্য এসে পৌঁছেছে ইরানের আপরিন স্থলবন্দরে। শনিবারের এ ঘটনায় তেহরান এবং মস্কোর মাঝে বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো এবং ভবিষ্যতে ইরান, রাশিয়া, এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে নিয়মিত রেল যোগাযোগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। খবর- তেহরান টাইমস
রাশিয়া থেকে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে তেহরানের কাছাকাছি অবস্থিত আপরিন স্থলবন্দরে এই মালবাহী ট্রেনটি নিয়ে এসেছে ৬২টি চল্লিশ ফুট কন্টেইনার। এগুলোতে রয়েছে কাগজ পণ্য, কাগজের মণ্ড, এবং এ জাতীয় কিছু পণ্য যা ইরান ও ইরাকে সরবরাহ করা হবে। ১২ দিনের এই যাত্রায় ট্রেনটি কাজাখস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান পার হয়ে এরপর ইনচেহ বরুন সীমান্ত দিয়ে ইরানে প্রবেশ করে। ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রানজিট করিডোরের (আইএনএসটিসি) জন্য এটি একটি অভিনব সাফল্য।
যে কারণে এই ট্রেনটি ইরান ও রাশিয়ার জন্য একটি মাইলফলক
সোভিয়েত আমলে ইরানের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেল যোগাযোগ অটুট ছিল। তবে ১৯৯০ এর দশকে প্রথম আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে নাগর্নো-কারাবাখ যুদ্ধের সময়ে এ রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সাল থেকে তেহরান আবারও রাশিয়ার সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা শুরু করে।
আইএনএসটিসি একটি ট্রানজিট করিডোর, যার জন্য রাশিয়া, ইরান ও ভারতের মাঝে প্রথমে চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০০২ সালে। এতে আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, কাজাখস্তান, বেলারুশসহ আরো কিছু দেশ যুক্ত হয়। মূলত মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে জাহাজ, রেল, ও স্থলপথে বাণিজ্যে সময় ও খরচ কমিয়ে আনা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। এই করিডোর পুরোপুরি চালু হলে সুয়েজ খালের উপরেও নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করা হয়। ইরান এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলো যাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলো প্রায়ই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাদের জন্য এই সুয়েজ খালের বিকল্প পথে বাণিজ্য অনেক ক্ষেত্রেই লাভজনক।
আইএনএসটিসি এর মাধ্যমে ২০২২ সালে প্রথম ভারতে পণ্য পাঠায় রাশিয়া, আর এবার পাঠানো হলো ইরানে। এছাড়া এ বছর মে মাসে ইরান, চীন, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, এবং তুরস্ক এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ উন্নয়নে চুক্তিবদ্ধ হয়। এর ধারাবাহিকতায় আপরিন স্থলবন্দরে রেলযোগে পণ্য পাঠায় চীন। ট্রেনটি আরো চারটি দেশের ওপর দিয়ে আসে। জলপথে যে পণ্য পৌঁছাতে ৩০ দিন লাগত, সেখানে রেলযোগে লেগেছে মাত্র ১৫ দিন।
বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে আপরিন স্থলবন্দর
ইরান রেল কর্তৃপক্ষের বাণিজ্য ও পরিচালনার উপ-প্রধান কর্মকর্তা মোর্তেজা জাফরি জানান, জুন থেকে শুরু করে ৩০টি মালগাড়ি পণ্য নিয়ে এসেছে আপরিন স্থলবন্দরে। এর মাধ্যমে সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোর মাঝে আমদানি, রপ্তানি, ও ট্রানজিটের একটি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠতে চায় ইরান।
রাশিয়ান রেলওয়ে লজিস্টিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওলেগ পোলিভ বলেন, এক সময়ে মস্কো থেকে ইরানের বন্দর আব্বাসে যেতে সময় বেশি লাগত, খরচও বেশি হতো। কিন্তু ইরান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখস্তানের মাঝে পারস্পরিক সহযোগিতার ফলে এই রাস্তায় এখন সময় লাগছে মাত্র ১৫ দিন।
বড় কয়েকটি করিডোরের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে আপরিন স্থলবন্দর এবং ভবিষ্যতে এর আরও উন্নতির সম্ভাবনা আছে, পোলিভ বলেন।
বাড়ছে ইরান ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য
নভেম্বরের ৩ তারিখে ইরান ও রাশিয়ার মাঝে একটি জয়েন্ট ট্রান্সপোর্ট টাস্ক ফোর্স গঠনের চুক্তি হয়। এছাড়া তেহরান ও মস্কোর মাঝে পণ্য সরবরাহের সুবিধার্থে একটি ডিজিটাল সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম চালু করার কথা হয় এই চুক্তিতে, ইরানের এক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে জানায় তেহরান টাইমস।
ইরানের পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের লজিস্টিকস এবং মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট বিভাগের প্রধান মেহদী আসাদির মতে, এই দুইটি উদ্যোগের লক্ষ্য হলো দুই দেশের মাঝে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজ করা, বাণিজ্যে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া সহজ করা।
এই চুক্তি সই করার আগে দুই দেশের মাঝে বাণিজ্যে বিভিন্ন বিষয় যেমন কাস্পিয়ান সাগরে জাহাজ চলাচলের সমস্যা, আইএনএসটিসি এর পূর্ব শাখায় প্রতিবন্ধকতা, এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় বসেন ইরানি ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা।
দুই দেশের মাঝে এই টাস্ক ফোর্স গঠিত হলে নিয়মিত অগ্রগতি পর্যালোচনা ও সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে, বলেন আসাদি। তবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা এবং যোগাযোগ আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর ইরান ও রাশিয়া উভয়েই।
সূত্র: সমকাল