শিরোনাম
◈ ডরি ফিসের নামে কী খাচ্ছেন? বাজারে 'ডরি ফিস' খুঁজতে গিয়ে সামনে এলো ভয়ংকর তথ্য!(ভিডিও) ◈ বাংলা‌দেশ জিত‌লো তামিমের সেঞ্চুরিতে, সি‌রিজ শেষ হ‌লো সমতায়  ◈ তোপের মুখে হ্যান্ডকাপ পরা অবস্থায় ছাত্রলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিল পুলিশ (ভিডিও) ◈ ‘ফজু পাগলা’ উপাধি যারা দিয়েছে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই: ফজলুর রহমান ◈ সরকার থেকে পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ ◈ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাতিল হবে ৬ ধরনের দলিল: আসছে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থা ◈ আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক: সিইসি নাসির উদ্দিন ◈ 'র' এর মাধ্যমে শিখ নেতাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত অমিত শাহ, চাঞ্চল্যকর তথ্যচিত্র প্রকাশ! (ভিডিও) ◈ জেট ফুয়েলের দাম আরও বাড়ল, বিমান ভাড়া কি বাড়বে? ◈ আ.লীগের বড় পরিকল্পনা ফাঁস, গ্রেপ্তার ২৫

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:১১ দুপুর
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

গণভোট নিয়ে বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি, সংঘাতের আশঙ্কা

মহসিন কবির: বিএনপি প্রার্থী ঘোষণার পর সারা দেশে নির্বাচনের আমেজ বইছে। তবে এখনো সুরাহা হয়নি গণভোট কবে হবে। বিএনপি বলছে নির্বাচনে দিন গণভোট হবে। জামায়াত বলছে জাতীয় নির্বাচনরে আগে গণভোট হতে হবে। ফলে রাজনীতিতে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 

বাংলাদেশের মানুষ সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেখতে চায় না, স্থিতিশীলতা দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রতিবাদের অধিকার সবার আছে, তা স্বীকার করেই তিনি বলেছেন, ‘কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায়, তাহলে কী হবে, সংঘর্ষ হবে না? বৃহত্তর দল বাংলাদেশে যদি রাস্তায় নামে এগুলোর প্রতিবাদে, সংঘর্ষ হবে। এ জন্য কি আমরা শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছি?’

এছাড়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন গণভোট বিষয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি নয়। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে এক ডায়লগে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।

এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, আমরা বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। আমরা যেকোন সময় আলোচনায় বসতে রাজি আছি। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আলোচনায় বসতে উদ্বুদ্ধ করবো।’

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এটি স্বাক্ষরিত হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যখন সরকারের কাছে সুপারিশ করলো তখন বিরোধ তৈরি হলো। ডেমোক্রেসিতে আলোচনা এবং রাজপথে ভয়েস রেইস করাএই দুটোই চলে। আমরা তো ভায়োলেন্স করছি না।

ফলে দেশের রাজনীতি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শর্তের বেড়াজালে। বিশ্লেষকদের মতে, কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন মত থাকলেও সবাই এখন নির্বাচনমুখী। এর আগে নিজেদের দাবি কতটা আদায় করে নিতে পারে- তার প্রতিযোগিতা চলছে। খালি চোখে এটি বিরোধপূর্ণ মনে হলেও এসব শর্তকে একধরনের কৌশলী খেলা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। 

তাদের মতে, বিএনপি ইতোমধ্যে ২৩৭ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। জামায়াত অনেক আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচার চালাচ্ছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করেছে। অন্যান্য দলেও প্রার্থী ঘোষণা ও যাচাই-বাছাই চলছে। দলগুলো এখন শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি ও সমঝোতায় ব্যস্ত। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসির প্রস্তুতি শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারও ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতে নির্বাচন নিয়ে আপাতত কোনো অনিশ্চয়তা নেই- এমনটা বলাই যায়।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এতে রাজনীতির মাঠে শুরু হয় নতুন মেরুকরণ। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররাও নতুন দল গঠন করে ভোটের মাঠে সক্রিয়। এদিকে আদর্শ ও মতভিন্নতা থাকলেও ইসলামী দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে থেকে নিজেদের বড় শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটিয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে অনেক কিছু ফয়সালা করে নিতে চায় ইসলামী দলগুলো, যার মধ্য দিয়ে তাদের রাজনীতি পাকাপোক্ত হবে। তারই আলোকে জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয়ে পরিবর্তনের প্রতি সোচ্চার ইসলামী দলগুলো। তারা মনে করে, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র দাবিদার বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি জুলাই সনদের সবকিছু বাস্তবায়ন নাও করতে পারে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে দাবিগুলো আদায় করে নিতে চায় ইসলামী দলগুলো। 

অন্যদিকে এনসিপিও মনে করে, শক্তিশালী দল প্রতিষ্ঠা ও নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘ করতে বিদ্যমান সংবিধানের অনেক বিষয় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া নির্বাচন পরবর্তী এনসিপি নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। তারা চায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদের অধ্যাদেশ জারি করা হোক। আর বিএনপি যেসব বিষয়ে আপত্তি তুলেছে, সেগুলো যেন সনদে না থাকে। এদিকে বিএনপি চায় গত ১৭ অক্টোবর যেই জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। এর বাইরে কোনো কিছু মেনে নেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে দলটি। এসব কারণে জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৮ মাস ধরে আলোচনা করে একটা সনদ প্রস্তুত করলেও তা বাস্তবায়ন কোন পদ্ধতিতে হবে- এর সমাধান না দিয়ে সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সিদ্ধান্তহীন সরকার। গত ৩ নভেম্বর জুলাই জাতীয় সনদ ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে মধ্যে দলগুলো ঐক্য না হলে সরকার নিজেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ১০ নভেম্বরের মধ্যে সমঝোতা দরকার। গতকাল পর্যন্ত দলগুলো নিজেদের অবস্থানে এক বিন্দুও ছাড় দিতে রাজি না। এই অবস্থায় চলতি সপ্তাহে কী ঘটতে যাচ্ছে- তা নিয়ে রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। তাই চলতি সপ্তাহকে আগামীর রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি তুলে রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ইসলামী দলগুলো। দাবি আদায় না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চায় ইসলামভিত্তিক ৮টি দল। তাদের এই দাবিকে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র বলেছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট হতে হবে। এর আগে গণভোট হতে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে জামায়াত আসনভিত্তিক ভোটের প্রচারণার পাশাপাশি প্রতিদিন জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে কথা বলছে। দলটির শীর্ষ নেতারা সরকারকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করলেও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে তারা মাঠ গোছাচ্ছে। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি কাছাকাছি চলে এসেছে, কিন্তু গণভোটের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে।

এনসিপি বলছে, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে হলেও তাদের আপত্তি নাই। তবে তারা চায় জুলাই জাতীয় সনদের আদেশটা যেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেন। সেই আদেশের ভাষাটা যেনো আগেই সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো হয়, তার নিশ্চয়তা চায় দলটি। জুলাই সনদের আদেশ প্রধান উপদেষ্টাকেই দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (ভিন্নমত) বলে কিছু থাকবে না।

‘রাজনৈতিক দলগুলোর এমন কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসা উচিত’- মন্তব্য করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক নুুরুল আমিন বেপারী আমাদের সময়কে বলেন, রাজনীতির সৌন্দর্য হচ্ছে ছাড় দেওয়া। রাজনীতিতে কে কতটুকু ছাড় দিতে পারে সেটাই বড় সৌন্দর্য। ছাড় না দিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব না। তিনি বলেন, জামায়াত, এনসিপি বা ইসলামী দলগুলো যদি কঠোর অবস্থানে থাকে তাহলে নির্বাচন পেছাতে পারে; যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। ভারত চায়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হোক। কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেবে চিন্তে কথা বলা উচিত। তবে মনে হচ্ছে, এই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হবে; নির্বাচনের আগেই দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাবে। 

দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থানকে ‘ইগো’ সমস্যা বললেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না। দলগুলোর কাছে বিষয়টা ইগো সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে যেহেতু বিএনপির পর জামায়াতই বড় দল, তাই তারা চাপ সৃষ্টি করছে। দলগুলোকে এখান থেকে সরে আসা উচিত। তাছাড়া সরকার যেভাবে দলগুলোর ওপর সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছে এটা বাস্তবমুখী না। দলগুলো এতদিন বসে সমঝোতা হলো না, এখন হবে সেটাও মনে হয় না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে না নিজের সিদ্ধান্ত দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া। সরকারকে দলগুলোর সঙ্গে আবার বসে তাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকারকেও ভেবে চিন্তে পা বাড়ানো দরকার। এই মুহূর্তে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তাহলে যে কোনো একটি পক্ষ ক্ষুব্ধ হতে পারে। তাতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। তাই সরকারকে দ্রুত দলগুলোর সঙ্গে বসে একটা সমঝোতায় পৌঁছে নির্বাচনের দিতে যেতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়