পাহাড় ঝিরি ঝরনা উপত্যকা ও অরণ্যের সবুজ জনপদ খাগড়াছড়ি। জেলায় দুর্গম বুনো পাহাড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঝরনা। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সুন্দর ঝরনা শিলাছড়ি ঝরনা। শিলা বা পাথরে মোড়ানো ঝিরির নাম অনুসারে ঝরনার নাম রাখা হয়েছে শিলাছড়ি ঝরনা। দুর্গম বুনো পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এ ঝরনা এখন হয়ে উঠেছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের নতুন গন্তব্য।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও রাঙ্গামাটির লংগদুর সীমান্তবর্তী জনপদ শীলাছড়িতে এর সন্ধান মেলে ২০২১ সালে। লোকালয় থেকে হেঁটে ঝরনায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। এখানে উঁচু-নিচু পাহাড়ের পরিবর্তে হাঁটতে হবে ঝিরিপথে। তাই হাঁটার কষ্ট কিছুটা কম। ঝিরির শীতল পানিতে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে উঁচু পাহাড়। টারশিয়ান যুগের পাথরে মোড়ানো পাহাড়। প্রায় ২০ থেকে ৪০ ফুট প্রস্থের ঝিরি বড় বড় পাথরে ঠাসা। পাহাড়ের কোথাও এমনটা দেখা মেলা ভার। বড় বড় পাথরের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসছে স্ফটিক স্বচ্ছ জলের ধারা। ছন্দে ছন্দে পাথর বেয়ে নেমে আসে ঝরনা ধারা। প্রকৃতির নীরবতা ভেঙে এখানে সৃষ্টি হয় অপূর্ব সুর-তাল-লয়। পাথরে মোড়ানো ঝিরিতে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে ফিরে গেছি সেই টারশিয়ান যুগে।
‘শিলাছড়ি’ ঝরনার কাছাকাছি যেতেই ভেসে আসে জলের শব্দ। পাথরে বেয়ে ওপরে ওঠে ঝরনা দর্শন করতে হয়। সবুজ ক্যানভাসে শ্বেত-শুভ্র ঝরনা, চারপাশে সবুজ। এরই মাঝে পাহাড় থেকে নেমে আসছে জলের ধারা। ঝরনার উচ্চতা ১২০ ফুটের বেশি, প্রস্থ প্রায় ৭০ ফুট। চোখে না দেখলে ঝরনার এত বড় অবয়ব কল্পনাও করা যাবে না। নীলাকাশ আর সূর্যের আলোতে ঝরনার জল আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখানে এসে মুগ্ধ পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক বলেন, ‘পাহাড়ে বেড়াতে এসে এত সুন্দর একটা ঝরনা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম সুন্দর ঝরনা এটি। এখানে যাওয়ার পথও বেশ রোমাঞ্চকর। তবে পাহাড়ি ঝিরি ও পাথুরে পথে সাবধানে হাঁটতে হয়। রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এখানে আসার পর সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।’
মো. জাকির হোসেন নামে স্থানীয় এক সংগঠক বলেন, আমরা দীঘিনালা থেকে গাড়ি করে ডাঙ্গাবাজার পৌঁছে সেখান থেকে দুই ঘণ্টা পায়ের হেটে শিলাছড়ি ঝরনায় যেতে হয়। এখানে যাতায়াতের পথ বেশ দুর্গম। শিলাছড়ি ঝরনায় পৌঁছানোর আগেও আরো কয়েকটি ছোট-বড় ঝরনা দেখা যায়। স্থানীয়রা এখানকার প্রকৃতি রক্ষার বিষয়ে বেশ সচেতন। ঝিরি থেকে পাথর তোলা নিষেধ। ঝিরিতে পাথর থাকায় সারা বছরই পানির প্রবাহ থাকে। এ রকম একটি ঝরনা দেখে সবাই মুগ্ধ হন।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. ফরিদ মিয়া তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রচুর প্রাকৃতিক ঝরনা রয়েছে। এসব ঝরনায় বর্ষায় যেভাবে পানি প্রবাহিত হয় তা ধরে রাখতে গেলে আমাদের বন রক্ষা করতে হবে। নতুন করে বনায়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা করতে হবে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফখারুল ইসলাম খন্দকার ইত্তেফাককে বলেন, ‘খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ঝরনা। পর্যটকদের কাছে ঝরনাগুলো প্রধান আকর্ষণ। ঝরনাসহ পর্যটন স্পটগুলো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় রয়েছে, পাহাড় ট্রেকিংয়ের সুবিধা বাড়ানো, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যটকদের জন্য বিশ্রাম শেড, ওয়াশরুম, ওয়াচ টাওয়ার তৈরি, ইত্যাদি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।’
সূত্র: ইত্তেফাক