মহসিন কবির: নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজনের দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ও দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। দল দুটি পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দ্বন্দ্ব আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে কাঁদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকলে ফ্যাসিস্ট সুয়োগ নিতে পারে। ইতোমধ্যে তারা সে জানান দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জটিকা মিছিল করছে। ধরাও বলছে কিন্তু থাকতেছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত পারা-মহল্লায় সর্বদলীয় ঐক্য গঠন করা। যাতে ফ্যাসিস্টরা রাস্তায় নামতে না পারে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে এক সময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল কয়েক বছর আগে থেকেই। জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়তে থাকে।
রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশে রাজনৈতিক যে অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে সমানভাবে ‘দোষারোপ’ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি দাবি করেন, এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে। রোববার ঢাকার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেলেন নাহিদ।
এসময় বর্তমান রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ পাওয়ার দাবি তোলেন তিনি। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ চলছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে সুপারিশমালা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে তা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলছে বিএনপি। দলটি বলছে, তাদের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ লিপিবদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি ছিল সনদে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি জুলাই সনদে না থাকলেও তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে এক দিনে গণভোটের কথা বলছে।
অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করছে। তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশমালার বিষয়েও ইতিবাচক।
এক প্রশ্নে এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে শুরু থেকেই সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। ফলে তারা কতটা সংস্কারের পক্ষে, এ নিয়ে জনগণের প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের কাজে মনে হচ্ছে, তারা নির্বাচনকে পেছানোর কোনো দুরভিসন্ধিতে আছে। একদল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেকদল নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে।”
এনসিপি এ দুটির কোনোটিই চায় না দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা চাই, ফেব্রুয়ারিতে যথাসময়ে নির্বাচন হবে। জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে এবং বাস্তবায়ন হবে। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐকমতে আসেন।”
প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ চেয়ে নাহিদ বলেন, “জুলাই সনদ অবশ্যই ড. ইউনূসকে জারি করতে হবে। জুলাই সনদ যদি তথাকথিত রাষ্ট্রপতি থেকে জারি হয়, তাহলে জুলাই সনদের কোনো আইনি বা রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না। বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার কফিনে শেষ পেরেক মারা হবে।