কৃষ্ণ সাগরে ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী ট্যাংকারের নাবিকরা প্রাথমিকভাবে উদ্ধার হলেও, জাহাজটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন ১০ নাবিক।
তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাবিক মাহফুজুল ইসলাম প্লাবন। গত ৫ দিন ধরে তারা কোনোভাবে টিকে আছেন বলে আজ শনিবার ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন প্লাবন।
গত ২৮ নভেম্বর এমটি কায়রোস জাহাজে ড্রোন হামলার পর প্রথমে তাদের উদ্ধার করে তুরস্কের কোস্টগার্ড। তখন তারা যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু সে যাত্রায় উদ্ধার পেলেও ভাগ্য সহায় হয়নি প্লাবনসহ ১০ জনের। গত ৫ দিন জাহাজটি সাগরে ভাসছে। তারা কোনো স্থানীয় বন্দর কর্তৃপক্ষ বা জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।
ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির চীনা মালিকপক্ষ সেটিকে উদ্ধারে একটি টাগবোট ভাড়া করেছিল। সেই টাগবোটে করে গত ১ ডিসেম্বর তারা ইস্তাম্বুলে নোঙর এলাকার কাছে যান। তাদের লক্ষ্য ছিল এমটি কায়রোস জাহাজটিকে গভীর সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা।
কিন্তু জাহাজ উদ্ধারের আগেই টাগবোটটি চলে যায়। এরপর বিপদের শুরু।
হোয়াটসঅ্যাপ কলে প্লাবন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, জাহাজের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং ইঞ্জিন অচল থাকায় নাবিকরা নোঙর ফেলতে ব্যর্থ হন এবং জাহাজটি খারাপ আবহাওয়ার কারণে তুর্কি উপকূল থেকে বুলগেরিয়ার উপকূলের দিকে ভেসে যেতে শুরু করে।
তিনি বলেন, 'গত দুই দিন ধরে বুলগেরিয়ান কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাইনি।'
প্লাবন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি ভেসে বুলগেরিয়ান জলসীমায় প্রবেশ করার পর তারা কোনোমতে নোঙর করতে সক্ষম হন।
তবে ভারী বর্ষণে তাদের বেশিরভাগ খাদ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে গেছে এবং জাহাজটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দশ ক্রু বর্তমানে একটি ছোট কেবিনে আশ্রয় নিয়েছেন।
তারা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, আটকে পড়া নাবিকদের উদ্ধারের জন্য তারা তুরস্ক ও বুলগেরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
গত ২৮ নভেম্বর বিকেলে তুরস্কের উপকূলের কাছে কৃষ্ণ সাগরে দুটি তেল ট্যাংকারে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী। এর মধ্যে এমটি কায়রোসের ৫ নাবিকের মধ্যে ৪ জন ছিলেন বাংলাদেশি। হামলার পরপরই তুর্কি কোস্টগার্ড সব নাবিককে উদ্ধার করে। তবে পরে প্লাবনসহ ১০ জন আবার টাগবোটে করে ক্ষতিগ্রস্ত ট্যাংকারে যান।
প্লাবন জানান, হামলার পর উদ্ধার বাকি ৩ বাংলাদেশি নাবিক বর্তমানে উড়োজাহাজে দেশে ফিরছেন।
হামলার সময় এমটি কায়রোস খালি ছিল এবং চীনের হয়ে অপরিশোধিত তেল আনতে মিশরের সুয়েজ বন্দর থেকে রাশিয়ার নভোরোসিস্ক বন্দরের দিকে যাচ্ছিল। উৎস: ডেইলি স্টার।