বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত ও সমাজজীবনে এক রহস্যময় নাম আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তাকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য গল্প, বিতর্ক ও গুঞ্জন। নব্বইয়ের দশকে ঢালিউডে আলোচিত নানা নারী, মাদক এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর পেছনে তার নাম প্রায়ই শোনা যায়।
সর্বশেষ আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ড মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এর আগে, অমর নায়ক সালমান শাহ-এর মৃত্যুকেও হত্যা হিসেবে বিবেচনা করে নতুন করে মামলা নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা হত্যা মামলায় রূপ নেয়, যেখানে মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি নায়ক সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, আর সহ-আসামিদের তালিকায় রয়েছেন প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
অনেকেই মনে করেন, তার নামের শেষে থাকা “ভাই” শব্দটি গডফাদার বা প্রভাবশালী পরিচয়ের প্রতীক। তবে বাস্তবে “ভাই” তাদের পরিবারের বংশীয় পদবি। পরিবারের সকল সদস্য— এমনকি নারীরাও— নামের শেষে “ভাই” ব্যবহার করেন। তার পিতা মোহাম্মদ ভাই ও মাতা খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।
তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভূত, ধর্মীয়ভাবে ‘বাহাইয়ান’ (Baháʼí) সম্প্রদায়ের অনুসারী। ভারত ভাগের পর ১৯৪৭ সালে তারা ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। “বাহাই” শব্দটি উচ্চারণে “ভাই” হয়ে যাওয়ায় প্রজন্মের পর প্রজন্মে সেটিই পারিবারিক নাম হিসেবে গৃহীত হয়।
ব্যবসায়ী থেকে চলচ্চিত্র প্রযোজক
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ১৯৬২ সালে জন্ম নেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। পারিবারিক ব্যবসা থেকেই শুরু হয় তার বাণিজ্যিক জীবন। বর্তমানে তিনি অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস এবং এমবি ফিল্মস-এর মালিক। এছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং ও সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা।
তবে বিতর্কের বাইরে নেই তিনি। মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরেও এসেছেন। কথিত আছে, ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আজীবন সদস্য হিসেবেও পরিচিত।
৯০-এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মস ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নামেন। তবে চলচ্চিত্রে তার আগমনের কারণ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। কেউ বলেন, নায়িকাদের প্রতি মোহ, কেউ মনে করেন কালো টাকা সাদা করার কৌশল, আবার কেউ বলেন মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করে ব্যবসা।
দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। আবার মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। কথিত আছে, ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাকি নায়িকাদের রূপের মোহে নাকি কালো টাকা সাদা করতে নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় অথবা মিডিয়ার মনযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন- সেটা নিয়ে চর্চা রয়েছে।
তবে এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন তিনি। পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতো তাকে। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।
এরশাদের আমলে তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দন্দ্বের কারণেই এরশাদ তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে।
একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে কিন্তু সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়। তবে তিনি ব্যাপক ভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। সেসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটাকে আত্নহত্যা বলেই প্রচার করা হয়।
শোনা যায় সালমান শাহ মারা যাওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারেন সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। সেসময় সালমান হত্যাকান্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। কিন্তু পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্র নায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা।
বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। উৎস: নিউজ24