পাইকারিতে প্রতি ড্রামে (২০৪ লিটার) বেড়েছে আড়াই হাজার টাকার বেশি। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি কার্টনে (২০ লিটার) ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে আরও বেশি দাম বেড়েছে। আমদারিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো ধরনের ঘোষণা দেয়নি। ১০ দিন ধরে পণ্যটির বাজার অস্থির হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এদিকে আবার হঠাৎ অস্থির কাঁচামরিচের দামে। পাশাপাশি বেড়েছে মাছের দামও।
ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চাহিদা অনুযায়ী তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো বুকিং দর ওঠানামা করছে। তাই সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তেলের বাজার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এখানে আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দাম এমনিতে কমে যাবে। কিছু কিছু বড় শিল্প গ্রুপের ভোজ্যতেল বেশি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মূলত দুই শিল্প গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, বরাবরের মতো বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তেলসহ ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করছে।
শুক্রবার খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৭৭ থেকে ১৭৮ টাকা। আর সুপার পাম অয়েল প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা ১৭০ টাকা। চার দিন আগেও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৬৮ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম ১৫০ টাকা ছিল। পাইকারিতে বাড়ার কারণে খুচরা বাজারেও খোলা তেলের দাম বেড়েছে। কয়েকজন ছোট ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি ড্রাম (২০৪ লিটার) খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৩২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ হাজার ১০০ টাকা। আর প্রতি ড্রাম খোলা সুপার পাম অয়েলের দাম ২৯ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৬০০ টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দর প্রতি লিটার ১৮৯ টাকা, পাঁচ লিটার ৯২২ টাকা, খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম প্রতি লিটার ১৫০ টাকা নির্ধারিত করেছিল। কিন্তু এই দামে কোথাও ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের স্লিপ প্রথা
ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটি বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজারদর যদি বেড়ে যায় তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। ডিও কারসাজির কারণে ভোজ্যতেলের দাম অস্থির।
চট্টগ্রামে হঠাৎ কাঁচামরিচের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে কম সরবরাহের কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৮০ টাকায়। তবে মানভেদে ১০ টাকা কমবেশি রয়েছে। পাঁচ দিন আগেও এক কেজি মরিচের দাম ছিল ১৯০-২২০ টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতি কেজিতে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে ১৫০ টাকারও বেশি। গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে কাঁচামরিচের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকার বেশি ছিল।
বাজারদর
চট্টগ্রামে বেড়েছে সামুদ্রিক মাছের দাম। বেশির ভাগ মাছ গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলাপাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ থেকে ২৪০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০ টাকা, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ মাছ প্রতিকেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুরগির দাম কিছুটা স্থিতিশীল। সোনালি মুরগি প্রতিকেজি ৩৫০ টাকা, বয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসির মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম কিছুটা স্থিতিশীল। কাঁচাবাজারে সবজির মধ্যে কাঁকরোল, ঝিঙা, পটোল, ঢ্যাঁড়স, শসা, করলা প্রতিকেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ১২০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখি, লাউ, মুলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুরলতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচাকলার হালি ৬০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর মিষ্টিকুমড়ার দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূত্র: যুগান্তর