শিরোনাম
◈ সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তনের আভাস ◈ দেশের ইতিহাসে সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ দামে স্বর্ণ, ভরি কত? ◈ নৌবাহিনীর ১৭ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন মা ইলিশ রক্ষায় ◈ বাংলাদেশ মানবপাচার-বিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করেছে: মার্কিন টিআইপি রিপোর্ট ◈ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় চীন : শি জিনপিং ◈ মার্শের সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের বিরু‌দ্ধে সিরিজ জিতলো অস্ট্রেলিয়া ◈ এন‌সিএল, ৩ বলে ৩ উইকেট হারা‌নোর প‌রেও জিত‌লো রাজশাহী  ◈ সউদী রাষ্ট্রদূতের প্রেমে পড়ে বিপর্যস্ত সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ মেঘনা আলমের: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকের প্রতিবেদন ◈ কয়েকজন উপদেষ্টা প্রতারণা করেছে: নাহিদ ইসলাম ◈ বাংলাদেশ-চীনের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৪৩ বিকাল
আপডেট : ০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সউদী রাষ্ট্রদূতের প্রেমে পড়ে বিপর্যস্ত সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ মেঘনা আলমের: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকের প্রতিবেদন

ইন্ডিপেন্ডেন্ট: বাংলাদেশের সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ ও সমাজকর্মী মেঘনা আলমের জীবন হঠাৎ করেই বদলে যায় এক কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে। সউদী আরবের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র প্রেমঘটিত সম্পর্ক শুধু সমালোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তা পরিণত হয়েছে জাতীয় এবং কূটনৈতিক কেলেঙ্কারিতে। এই ঘটনার প্রভাব এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এতে মেঘনার খ্যাতি, কর্মজীবন এবং এমনকি ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঘটনার শুরু গত বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে, যেখানে প্রথমবারের মতো মেঘনার সঙ্গে সউদী রাষ্ট্রদূতের পরিচয় হয়। শুরুতে সৌজন্য আর উপহারের বিনিময় দিয়ে শুরু হলেও, দ্রুতই তা রূপ নেয় এক ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রেমে। কিন্তু এই সম্পর্ক ঘিরে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যা মেঘনার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে বড় ক্ষতির কারণ হয়। শেষে ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল, রাষ্ট্রদূতের অভিযোগের জেরে মেঘনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ করা হয়, তিনি রাষ্ট্রদূতকে ‘হানিট্র্যাপ’-এ ফেলে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন, যা বাংলাদেশ-সউদী সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

মেঘনা আলম, ২০২০ সালে মিস আর্থ বাংলাদেশ খেতাব জিতে জাতীয় পরিচিতি পান, বর্তমানে মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রশিক্ষক। তিনি জানান, রাষ্ট্রদূত প্রথমে তাকে কুরআন শরিফ, নামাজের চাদর ও প্রার্থনার পোশাক উপহার দেন। এরপর আসতে থাকে ফুল, গয়না এবং এমনকি ২০০ কেজি খেজুর, যার গায়ে লেখা ছিল “সউদী বাদশাহর উপহার”। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও মেঘনা ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হন। তিনি বলেন, “স্বীকার করছি, এত শক্তিশালী একজন মানুষ আমাকে অনুসরণ করছে—এটা আমার ভালো লেগেছিল। তবে সবকিছু খুব দ্রুত ঘটছিল।”

রাষ্ট্রদূত তাকে হীরের আংটিও উপহার দেন এবং দাবি করেন তিনি বিবাহবিচ্ছিন্ন। তবে সতর্ক করে দেন, সউদী কূটনীতিকদের বাংলাদেশি নারীকে বিয়ে করার অনুমতি নেই, কারণ তা সউদী আইনে বৈধ হবে না। এদিকে, গুজব ছড়াতে থাকে যে মেঘনা গর্ভবতী হয়ে গোপনে গর্ভপাত করেছেন। মুসলিম সমাজে এ ধরনের বিষয় নিষিদ্ধ হওয়ায় তার ইমেজে বড় ধাক্কা লাগে। অনেক ব্র্যান্ড তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে।

একপর্যায়ে একজন নারী ফোন করে নিজেকে রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী দাবি করেন। তিনি মেঘনাকে জাতিগতভাবে অপমান করে বলেন, “সে কখনো তার বন্ধুদের কাছে স্বীকার করবে না যে সে এক ‘বাংলালী’কে ভালোবাসে।” এতে মেঘনা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অধিকাংশ উপহার ফেরত দেন। শুধু কুরআন, নামাজের চাদর আর কিছু ধর্মীয় উপহার রেখে দেন। তিনি রাষ্ট্রদূতের কাছে গুজবের ব্যাখ্যা ও ক্ষমা চান, নইলে অভিযোগ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।

এর পরদিনই গত ৯ এপ্রিল, সাদা পোশাকের কিছু লোক তার বাসায় হাজির হয় জন্মসনদ ও মাদকের অজুহাত তুলে। আতঙ্কিত মেঘনা ফেসবুকে লাইভে আসেন। এরপর তাকে আটক করে একটি গোপন স্থানে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, ফোন-ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে তাকে লাইভ ভিডিও মুছে ফেলতে বাধ্য করা হয়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়, যা পূর্বে গুমের জন্য কুখ্যাত ছিল। অভিযোগ ছাড়াই গ্রেপ্তার করে দিনকয়েক পর তার নামে প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থহানির মামলা দেওয়া হয়।

পুলিশ দাবি করে, ব্যবসায়ী দেওয়ান সামিরসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে মিলে মেঘনা কূটনীতিক ও ধনী ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলতেন। ১০ এপ্রিল আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে ৩০ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পরদিন বলা হয়, তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও বিদেশি সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। তবে ২৮ এপ্রিল তিনি জামিন পান। এ সময় সামাজিক মাধ্যমে তার পুরোনো ছবি ছড়িয়ে দিয়ে তাকে ‘বিদেশি এজেন্ট’’ হিসেবে অপমান করা হয়।

২৭ জন নারী অধিকারকর্মী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে চিঠি লিখে মেঘনার মুক্তি দাবি করেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, “স্পেশাল পাওয়ার্স অ্যাক্ট” আইনটি ভয়ঙ্কর এবং স্বেচ্ছাচারীভাবে আটক রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তারা মেঘনার মুক্তি অথবা বৈধ অভিযোগ আনার আহ্বান জানায়।

মেঘনা আলমের দাবি, তাকে গ্রেপ্তারের দিনই রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ছাড়েন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজের উপস্থিতি মুছে ফেলেন। বর্তমানে মেঘনা বাবা-মায়ের কাছে থাকছেন। নিজের ফ্ল্যাট ছাড়তে হয়েছে হয়রানির কারণে। তিনি এখনো নিয়মিত আদালতে যাচ্ছেন এবং মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অনুবাদ : ইনকিলাব 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়