রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থপেডিক্স ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রোগীর ভিডিও ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করে সহযোগিতার নামে অর্থ সংগ্রহ করছে ওই হাসপাতালের একজন নার্স। অভিযোগ রয়েছে, সংগৃহীত অর্থ আহত রোগীর চিকিৎসার পেছনে ব্যয় না করে নিজে আত্মসাৎ করেন। এ নিয়ে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক শাহিনা খান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও জাতীয় অর্থপেডিক্স ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ব্রিটিশ নাগরিক শাহিনা খানের লিখিত অভিযোগে বলা হয়, পঙ্গু হাসপাতালে তার অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে যান গত ২৮ অক্টোবর। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রবেশগেটের সামনে এক অসুস্থ রোগীকে পড়ে থাকতে তিনি দেখতে পান। পরদিন তিনি অনুরোধ করে ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। অজ্ঞাত ওই রোগীর পায়ে পঁচন ধরেছে এবং চিকিৎসকরা জানান যে তার শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক। ওই রোগীকে বেডে নেয়ার আগে তার শরীরের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য একজন নার্সকে অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই নার্স অনুরোধ না শুনলে তিনি আরেকজনের সহযোগিতায় তার শরীর পরিষ্কার করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু ২৯ অক্টোবর ওই রোগী মারা যান। এর আগে ব্রিটিশ ওই নাগরিক চিকিৎসাধীন রোগীর ছবি তুলে তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এতে কয়েকজন প্রবাসী তার চিকিৎসার জন্য ৪৫ হাজার টাকা তার কাছে পাঠায়। এরই মধ্যে ওই রোগী মারা গেলে ব্রিটিশ নাগরিক শাহিনা খান তার কাছে রাখা ৪৫ হাজার টাকা কি করবেন-তা নিয়ে হাসপাতালের নার্স সুফিয়া আক্তার সুমিকে জানান।
৪৫ হাজার টাকার খবর জানতে পেরে নার্স সুমির মধ্যে লোভের সৃষ্টি হয়। সুমি ওই টাকা তাকে দিয়ে দিতে বলেন। সুমি তখন ব্রিটিশ নাগরিককে জানায় যে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গরীব ও অভাবী রোগীদের ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে অনেক টাকা সহযোগিতার নামে সংগ্রহ করেন। সেসব টাকা তিনি জনকল্যাণে ব্যয় করেন। এই ৪৫ হাজার টাকার দাবিদার তিনি নিজে । তার কাছে এই টাকা দেয়া হলে, তিনি অসুস্থ রোগীদের পেছনে ব্যয় করবেন।
ব্রিটিশ নাগরিক শাহিনা খান বলেন, নার্স সুমির কাছে এর আগে ১৩ হাজার টাকা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই টাকা তিনি অসুস্থ রোগীদের পেছনে ব্যয় করেননি। এ কারণে তিনি ১ নভেম্বর পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে গরীব রোগীদের মাঝে ৪৫ টাকা বিলিয়ে দেন। এ খবর নার্স সুমি জানতে পেরে তাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এরপর থেকে তার কাছে সুমি বিভিন্ন সময় ফোন করে টাকা তাকে দিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
শাহিনা খান আরও বলেন, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের কোনো একদিন শেরেবাংলা নগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাহবুব আলম ফোন করে জানান যে পঙ্গু হাসপাতালের নার্স সুফিয়া আক্তার সুমি তার বিরুদ্ধে থানায় একটি জিডি করেছেন।
এ খবর শোনার পর শাহিনা খানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পঙ্গু হাসপাতালে রোগীদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, ইনস্ট্রগ্রামে দিয়ে সংগৃহীত টাকা রোগীর পেছনে ব্যয় না করে নিজে আত্মসাৎ করেন। উল্টো ওই নার্স তার বিরুদ্ধে জিডি করেছেন।
এ নিয়ে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মাহবুব আলম বলেন, তারা দুজনই মানুষের সেবা করেন। তবে প্রবাসী নারীর অভিযোগ যে ওই নার্স রোগীর ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে দিয়ে মানুষের দানের টাকা আত্মসাৎ করেন। আর নার্সের অভিযোগ, প্রবাসী নারী তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তবে বিষয়টি তদন্তাধীন।
সূত্র: ইত্তেফাক