মনিরুল ইসলাম: [২] জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের পাস হওয়া নতুন বাজেট আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে। আজ থেকে সারাদেশে চলছে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন। বাজেট কার্যকর শুরু হলো আজ থেকেই। গত বুধবার রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বাজেট পাসের পর রাতেই ২টি বিলে সম্মতি প্রদান করেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতির মাধ্যমে নতুন বাজেট কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকতা পায়।
[৩] ৩০ জুন বুধবার সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই বাজেটের নাম দিয়েছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’।
[৪] স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে এই বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।
[৫] অর্থমন্ত্রী ৩ জুন সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ সরকারি দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, গণফোরামসহ সংসদ সদস্যরা।
[৬] বাজেট উপস্থাপনের পর ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয় ৭ জুন। এরপর চার দিন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়। এরও পর টানা ১০ দিন বিরতি দিয়ে বাজেটের ওপর আলোচনা হয় ২ দিন। সব মিলিয়ে শতাধিক সদস্যরা বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। গত মঙ্গলবার ২৯ জুন সংসদে অর্থবিল পাস হয়।
[৭] বাজেটে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (এমএফএস) ওপর বাড়তি কর আরোপের যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
[৮] বাজেটে বিনা প্রশ্নে নগদ টাকা, শিল্পে বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, ফ্ল্যাট, ব্যাংক আমানতসহ কয়েকটি খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
[৯] শিল্পের কাঁচামাল কেনায় ক্রসচেকে লেনদেনের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। ৫০ হাজারের বেশি টাকার কাঁচামাল কিনলে চেকে লেনদেনের বিধান চালু রয়েছে বর্তমানে। এই সীমা বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।
কর্মীদের বেতন পরিশোধের ক্ষেত্রেও নতুন নিয়ম আনা হয়েছে অর্থ বিলে। কর্মীদের বেতন-ভাতা ও সম্মানীর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তা ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, সংশোধন করে
[১০] এবারের বাজেটের মোট আকারের মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর পরিচালন ব্যয় ৩ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যয় হবে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। সুদ বাবদ ব্যয় রয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
[১১] বাজেটে রাজস্ব খাত থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা আদায় করার চিন্তা সরকারের। সংস্থাটিকে আয়কর ও ভ্যাট মিলিয়ে ২ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
[১২] নতুন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ১২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
[১৩] নতুন বাজেটে সম্পূরক শুল্ক থেকে ৫৪ হাজার ৪৬৫ কোটি, আমদানি শুল্ক থেকে ৩৭ হাজার ৯০৭ কোটি, রপ্তানি শুল্ক থেকে ৫৬ কোটি, আবগারি শুল্ক থেকে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। আগামী বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
[১৪] আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খাতের ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদেরা ৬২৫টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা হয় সংসদে। সব প্রস্তাবই কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।
[১৫] ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক, রুস্তম আলী ফরাজী, ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, লিয়াকত হোসেন খোকা, রওশন আরা মান্নান এবং বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা, মোশাররফ হোসেন ও গণফোরামের মোকাব্বির খান।
