ডেস্ক রিপোর্ট : ফরিদপুরের সালথায় লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর জোরদার পুলিশি অভিযানের কারণে উপজেলার আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামগুলো পুরুষ শুন্য হয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে ওই সব এলাকার বাড়ি-ঘরগুলোতে নারী আর শিশু ছাড়া কোনো সদস্য দেখতে পাওয়া যায়নি। এসময় বাড়ির নারী ও শিশুদের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাইরের মানুষ দেখলেই তারা ভয়ে দৌড়ে সরে যাচ্ছেন। আরটিভি
গত ৫ তারিখের ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৫টি। এই সব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৬১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৬ হাজার ৮০০ জনকে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত আটক করা হয়েছে মোট ৫১ জনকে।
নতুন যে চারটি মামলা হয়েছে তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করেছেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মোহাম্মাদ হাসিব সরকারের গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। এই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন... যে কারণে ফেসবুক লাইভের ভিডিও সরালেন মামুনুল হক (ভিডিও)
আরেকটি মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে তিন থেকে চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার সালথা থানার এসআই (উপপরিদর্শক) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং প্রায় চার হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন।
ফুকরা বাজার এলাকার করিমন বেগম জানান, সব সময় ভয়ে রয়েছি। পুলিশ দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে যাচ্ছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে রয়েছে।
নূরজাহান নামে আরেকজন জানান, ওই দিন অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে হামলা করছে। আমাদের গ্রামের কোনো লোক ছিল না। শুনেছি ফুকরা বাজারে এসিল্যান্ডের সঙ্গে থাকা সদস্যদের সাথে বাজারের গন্ডগোলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে।
ঘট্টি এলাকার মনির নামে একজন জানান, বালিয়াঘট্টি এলাকা ও উপজেলা কেন্দ্রীক এলাকার বাড়িগুলোতে কোন পুরুষ সদস্য নেই। ঘটনার পর থেকে ওই সব এলাকার লোকজন পলাতক রয়েছে। কোন নিরীহ লোক যেন হয়রানির শিকার না হন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বলেন, এ ঘটনার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিদের ধরতে পুলিশ দিনরাত জোরদার অভিযান চালাচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকায় পুলিশি অভিযানের কারণে পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। তারপরও পুলিশ তাদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই ঘটনায় যেই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা পুলিশ গ্রহণ করবে। এ ব্যাপারে কোনরকমের ছাড় দেয়া হবে না। এরই মধ্যে ৫১ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় গুলিবৃদ্ধ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য, লকডাউন না মানাকে কেন্দ্র করে সোমবার বিকেলে সালথার ফুকরা বাজারে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এসিল্যান্ডের সঙ্গে থাকা সদস্যদের সাথে স্থানীয়দের। এর পরই বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ সালথা উপজেলা পরিষদ, এসিল্যান্ড অফিস ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।