স্বর্ণের পর এবার বিশ্ববাজারে লাফিয়ে বাড়ছে রুপার দাম। পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়ও।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) স্পট মার্কেটে রুপার দাম ০.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্স ৬৪.০৯ ডলারে, যা দিনের শুরুতে ছুঁয়েছিল নতুন রেকর্ড ৬৪.৫৬ ডলার।
সপ্তাহের হিসেবে রুপার দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্পখাতে ব্যাপক চাহিদা, কমে আসা মজুত এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজ’ তালিকায় রুপার অন্তর্ভুক্তির দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
স্যাক্সো ব্যাংকের পণ্য কৌশল বিভাগের প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, 'শিল্প চাহিদা, বাজারের টানাপোড়েন ও খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রুপার দামকে শক্তিশালীভাবে সমর্থন দিচ্ছে।'
এদিকে সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কার কারণে এ বছরের শুরুর দিকে স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। সেই ধারাবাহিকতায় এ সপ্তাহেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সুদের হার কমলে কিংবা মার্কিন ডলারের মান পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা সাধারণত স্বর্ণ ও রুপার মতো মূল্যবান ধাতুতে বিনিয়োগ করেন।
নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াও হি চুয়া বলেন, ‘সুদের হার কমলে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ বা স্বল্পমেয়াদী বন্ড কেনার সুবিধা কমে যায়, ফলে ব্যবসায়ীরা সাধারণত রুপার মতো সম্পদ কেনেন। এতে স্বাভাবিকভাবেই রুপাসহ মূল্যবান সম্পদের দিকে চাহিদা সরে যায়।’
ওসিবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার ওং বলেন, ‘তুলনামূলক সস্তা বিকল্প খুঁজতে গিয়ে স্বর্ণের মূল্য বাড়ার 'ছিটকে পড়া প্রভাব' হিসেবেও রুপার উত্থানকে দেখা যেতে পারে।’
সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কোসমাস মারিনাকিস বলেন, ‘রুপা শুধু বিনিয়োগের সম্পদ নয়, বরং এটি একটি কাঁচামালও এবং আরও বেশি সংখ্যক উৎপাদকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।’
স্বর্ণ বা তামার চেয়ে রুপা বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী হওয়ায় মূল্যবান এই ধাতুটি বৈদ্যুতিক যান (ইভি) ও সৌর প্যানেলের মতো পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইভির বিক্রি বাড়তে থাকায় রুপার চাহিদা এবং উন্নত ব্যাটারি তৈরিতে ধাতুটির প্রয়োজন আরও বাড়বে।
তবে রুপার সরবরাহ দ্রুত বাড়ানো কঠিন। কারণ রুপা মূলত সিসা, তামা বা স্বর্ণের মতো ধাতুর উপজাত হিসেবে খনি থেকে পাওয়া যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র রুপার ওপর শুল্ক আরোপ করতে পারে, এমন উদ্বেগও বাড়িয়ে দিচ্ছে রুপার দাম।
এদিকে সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্রে রুপার মজুত বাড়ছে, যার ফলে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তার মোট রুপার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমদানি করে, যা উৎপাদন, গহনা এবং বিনিয়োগে ব্যবহৃত হয়।
অধ্যাপক কোসমাস মারিনাকিস বলেন, ‘রুপার ঘাটতি রোধে নির্মাতারা দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, যা বৈশ্বিক বাজারে ধাতুটির দাম আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী মাসগুলোতেও রুপার দাম উচ্চ পর্যায়ে থাকবে।’
সূত্র: সময়