সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা তাসনিমকে প্রকাশ্যে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন এক পর্যটক। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে এ ঘটনা ঘটে। সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ‘তাড়াতাড়ি’ ছেড়ে যাওয়ার জেরে উত্তেজিত ওই পর্যটক নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রশাসনিক কর্মকর্তা’ দাবি করে ইউএনওকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন ঘাটে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের।
এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যাতে একদল পর্যটক, ইউএনও ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা চলতে দেখা যায়। যদিও পরে ইউএনওর কাছে ক্ষমা চান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া ইব্রাহীম নামের ওই ব্যক্তি। অবশ্য ইউএনও ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশে গতকাল সকালে নুনিয়ারছড়ায় বিআইডব্লিউটিএর জেটিঘাটে হাজির হয় ১১ পর্যটকের একটি দল। তবে তারা ঘাটে পৌঁছানোর আগেই নির্ধারিত জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন দলের সদস্যরা। একপর্যায়ে তারা বাগবিতণ্ডায় জড়ান জাহাজ কর্তৃপক্ষ ও ঘাটে থাকা ইউএনওর সঙ্গে। দলের একজন নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরপর ইউএনওকে গ্রেপ্তার করতে বলেন ঘাটে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে। যদিও এমন আচরণে পরে বিপাকে পড়তে হয় ওই পর্যটক দলের সদস্যদের।
ঘটনা প্রসঙ্গে ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে ২ হাজারের বেশি পর্যটক পরিবহন করার নিয়ম নেই। এ ছাড়া আরও অনেক নিয়ম রয়েছে, যেগুলো তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।’
দায়িত্ব পালনের সময় এক পর্যটক হঠাৎ তাকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন জানিয়ে তানজিলা তাসনিম বলেন, ‘কিছু পর্যটক দাবি করেন তাদের জাহাজ টিকিটে নির্ধারিত সময়ের আগে ছেড়ে গেছে। এ নিয়ে তারা হট্টগোল করছিলেন, আমি দায়িত্বরত অবস্থায় কারণ জানতে গেলে হঠাৎ তাদের মধ্যে ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা দাবি করে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যকে আমাকে গ্রেপ্তার করার আদেশ দেন। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের ভিডিও সংরক্ষিত আছে। উনি হয়তো আমাকে চিনতে পারেননি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হলেও উনি এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করতে বলার এখতিয়ার রাখেন না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইব্রাহীম নামের সেই ব্যক্তি নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমি স্যারকে (ইউএনও) চিনতে পারিনি, সেজন্য দুঃখিত। আমি ও আমার কলিগরা (সহকর্মী) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছি। আমাদের টিকিটে জাহাজ ছাড়ার সময় ৭টা লেখা ছিল, কিন্তু ঘাটে এসে শুনি সেটা ৬টায় ছেড়ে গেছে।’
নদীর নাব্যতা ও জোয়ার-ভাটার কারণে জাহাজের সূচি পরিবর্তনশীল বলে জানান সিক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর। তিনি বলেন, ‘বেক্রুজ নামের জাহাজটি নাব্যতার কারণে ঘাট পরিবর্তন করে অন্য ঘাট দিয়ে গিয়েছে, পর্যটকরা মনে করেছেন সেটি ছেড়ে গেছে। পরে সেটির বিপরীতে থাকা কেয়ারি সিন্দাবাদ নামে অন্য একটি জাহাজে করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত সেই ব্যক্তি (ইব্রাহীম) ও তার সঙ্গে থাকা আরও ১১ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন যাত্রা করেছেন।’
দীর্ঘ বিরতির পর গত ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। এই মৌসুমে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবাল দ্বীপটিতে পর্যটকরা রাত যাপনের সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের ১২টি নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।