স্মার্টফোন ও গ্যাজেট ব্যবহারের যুগে চার্জার নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি জিনিস। বাজারে অসংখ্য কমদামি চার্জার সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই অল্প খরচে সেগুলো কিনে নেন। কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সস্তা চার্জার হতে পারে ভয়ংকর ঝুঁকির উৎস। নিম্নমানের উপাদান ও নিরাপত্তা সনদহীন এসব চার্জার আগুন লাগিয়ে পুরো ঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে দিতে সক্ষম।
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের চার্জার তুলনামূলক দামি হলেও সেগুলো কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বাজারে আসে। অপরদিকে সস্তা চার্জারগুলো অধিকাংশ সময়ই নিরাপত্তা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের এফসিসি সাধারণ ডিভাইসের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করলেও নকল চার্জার তা মানে না। ফলে ইলেকট্রনিক ডিভাইসে বাধা সৃষ্টি বা ইন্টারফিয়ারেন্স দেখা দিতে পারে।
প্রযুক্তি সাইট ‘স্ল্যাশগিয়ার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব চার্জারে ব্যবহৃত ক্যাপাসিটর অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় অনেক সময় লাইভ কারেন্ট বেরিয়ে আসে। যেখানে নিরাপদ দূরত্ব অন্তত পাঁচ মিলিমিটার হওয়া উচিত, সেখানে নকল চার্জারে পাওয়া গেছে মাত্র এক মিলিমিটার ফাঁক। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বেনামী ব্র্যান্ডের চার্জিং কেবল ব্যবহার করলে ডিভাইস অস্বাভাবিকভাবে গরম হয়ে ওঠে—যা মোটেও স্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তারের সামঞ্জস্যতা না থাকলে অতিরিক্ত শক্তি সরবরাহ হয় এবং ডিভাইসে অতিরিক্ত তাপ সৃষ্টি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কনজিউমার প্রোডাক্ট সেইফটি কমিশন ইতোমধ্যে ই-বাইক চার্জারসহ নানা নিম্নমানের চার্জারের অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা দিয়েছে।
শুধু ওয়্যার্ড চার্জার নয়, নিম্নমানের ওয়্যারলেস চার্জার ও পাওয়ার ব্যাংক থেকেও আগুন লাগার ঘটনা কম নয়। এর মূল কারণ নিম্নমানের ব্যাটারি এবং তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অভাব।
বাহির থেকে দেখতে সাধারণ মনে হলেও চার্জারের ভেতরকার কারিগরি অংশ অত্যন্ত সংবেদনশীল। সস্তা চার্জারে তারগুলো সঠিকভাবে সোল্ডার করা না থাকায় খুলে গিয়ে চার্জারের ভেতর শর্ট সার্কিট তৈরি করতে পারে। এতে শুধু চার্জার নয়, ফোন বা অন্য ডিভাইসও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সস্তা কেবল ব্যবহারের কারণে ফোনের ওয়ারেন্টিও বাতিল হতে পারে। অ্যাপলের মতো ব্র্যান্ড ডিভাইসের সঙ্গে দেওয়া মূল চার্জার ব্যবহার না করলে বীমা দাবি গ্রহণ নাও করতে পারে।
নিরাপত্তা সনদহীন চার্জারগুলো সঠিক মান বজায় না রাখায় ব্যবহারের সময় প্লাগ ভেঙে সকেটের ভেতর আটকে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায়। ইউএল, ইটিএল বা ওএসএইচএ কর্তৃক স্বীকৃত সনদ ছাড়া এসব চার্জার নিরাপদ নয়। বাজারে অনেক নকল চার্জার ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে তাই কেনার আগে সনদ যাচাই করা জরুরি।
সেইফটি ফার্স্ট-এর গবেষণায় দেখা গেছে, নকল চার্জিং প্লাগে মানহীন ‘পলিএবিএস’ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়, যেখানে ফায়ার-রিটার্ডেন্ট ফিচার থাকে না। আগুন লাগলে এই প্লাস্টিক থেকে অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া তৈরি হয়, যা শ্বাসকষ্ট বা ফুসফুসে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতিটি ডিভাইসের ইউজার ম্যানুয়ালে উল্লেখ থাকে সঠিক, পরীক্ষিত ও সার্টিফাইড চার্জার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। শুধু মূল চার্জারই নয়, নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের, আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষিত চার্জার ব্যবহার করাই নিরাপদ।
সস্তা বলে চার্জার কিনতে গিয়ে অনেক সময় বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়। যেমন ফোন নষ্ট হওয়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, এমনকি ঘরে আগুন লাগা পর্যন্ত।
সূত্র: আরটিভি