পিনাকী ভট্টাচার্য্য : যতোবার বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়গুলো সামনে আসছে ততোবারই আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ সেটায় উৎসাহ সহকারে সমর্থন করেছে। তথাকথিত শিক্ষিত আরবান এলিটরাও উৎসাহ নিয়ে সমর্থন দিয়েছে। আর শাসক দলের সমর্থকদের কথা তো বাদই দিলাম, আমি ওদের যুক্তিবাদী বিবেকবান আধুনিক প্রগতিশীল মানুষ বলে মনে করি না। এই বিচারবহির্ভূত হত্যা নিয়ে তাদের উল্লাস যখন তুঙ্গে তখন একটা ব্লান্ডার করে ফেলে এই ক্রসফায়ার মারানিরা। যেমন মাদকবিরোধী ক্রসফায়ারে একরামুলের হত্যার ঘটনা।
খেয়াল করলে দেখবেন, এই ক্রসফায়ার মারানিরা ক্রস ফায়ারের একেকটা সেক্সি ভার্সন বের করে। তেমন সেক্সি ভার্সন ছিলো ‘মাদকবিরোধী অভিযান’। এইবার ক্রসফায়ারের সেক্সি ভার্সন এসেছে তথাকথিত ‘হারকিউলিস’। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, অন্তত একজন ভিকটিমকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিলো। সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধীরও ফেয়ার ট্রায়াল পাওয়ার অধিকার আছে। এটাই একটা আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। এটা যদি সুবিধাভোগী আরবান এলিটরা না বুঝে তাহলে আপনার রাষ্ট্র তো ডিস্ফাংশনাল হবেই। যেখানে পুলিশ নৌকায় ভোট চাইবে, রাতের বেলায় ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হবে আদালতের রায় পছন্দ না হলে প্রধান বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হবে, আদালতের বারান্দায় বিচার প্রার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হবে পুলিশের সামনেই, ধর্ষিতার কোমরে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসাবে খোদ পুলিশই। মৃত ব্যক্তির নামে মামলা হবে নাশকতার, পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ীর নামে মামলা হবে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার। ২২ দিনের শিশুর বিরুদ্ধে হবে মারামারির মামলা। পঙ্গু ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে হবে রামদা নিয়ে পুলিশের ওপরে আক্রমণের মামলা।
আপনি যদি সরকারবিরোধী হন তাহলে আপনার সানডে মানডে ক্লোজ করে দেয়া হবে। আপনি সরকার পক্ষে হলেও নিস্তার নেই। একরামুল তো যুবলীগেরই নেতা ছিলো। রাষ্ট্র চলে একটা সামাজিক চুক্তিতে। আমি ভোট দিয়ে আমার নেতা নির্বাচন করবো। এটা একটা সামাজিক চুক্তি। আপনি সামাজিক চুক্তি ভাঙবেন ডেইলি আর ক্রসফায়ারের ছাপ দিয়ে সেইটা মেরামতের চেষ্টা করবেন। এইভাবে রাষ্ট্র টেকে না। ক্রসফায়ারের গুলিটা শুধু ভিকটিমকেই মারে না, মারে আইন আদালত আর খোদ রাষ্ট্রটাকেই।