শিরোনাম
◈ হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন ◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান ◈ আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে: ওবায়দুল কাদের ◈ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা শেষ, এখন চলবে ফাইজার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ৩১ মার্চ, ২০২৩, ০১:০৪ রাত
আপডেট : ৩১ মার্চ, ২০২৩, ০১:০৪ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাকিস্তানিদের চোখে একাত্তরের বাঙালি : আজকের হিরো আলম 

মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: বাংলাদেশ ও বাঙালীর প্রতি পাকিস্তানীদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। সেদেশের বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ও সাধারণ মানুষ মনে করে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো করেছে। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ দেখছে, এক ব্রিটিশ পাউণ্ডের বিনিময় মূল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় যেখান প্রায় ১৩০ টাকা, পাকিস্তানি মুদ্রায় তা প্রায় ৩৫০ টাকা। আর সরাসরি বিনিময়ে, এক বাংলাদেশী টাকা সমান প্রায় পৌনে তিন পাকিস্তানী রুপী।  

দৃষ্টিভঙ্গির এই যে-পরিবর্তন এটি সম্ভব হয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কারণে। কিন্তু স্বাধীনতার আগে, বাংলাদেশ যখন পূর্ব-পাকিস্তান ছিলো, তখন বাঙালী সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানী তথা বর্তমান পাকিস্তানীদের কীরূপ ধারণা ছিলো? 

গ্রামের দরিদ্র শ্রেণীমূলের কৃষ্ণবর্ণের কৃষকায় হিরো আলম সম্পর্কে শহুরে গৌরবর্ণের স্ফীতকায় ও শিক্ষিত লোকদের যে-দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান থাকা-কালে পশ্চিম পাকিস্তানী অবঙালীরা বাঙালী সম্পর্কে ঠিক একই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতো।   

পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানী তথা অত্যন্ত দীন-হীন ও নীচ মনে করতো। তারা বলতো, মাছ-ভাত খাওয়া বাঙালী খাটো, কালো ও কুৎসিত, হিন্দুসম নীচুজাতের মুসলিম ও ভীতু। পাকিস্তানীদের এ-ধারণা এমনই তীব্র ছিলো যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হওয়া সত্ত্বেও সংবিধান অনুসারে তাঁকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। 

পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে গোল টেইবল বৈঠক করার প্রস্তাব করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানও তাতে রাজি হন। কিন্তু পাকিস্তানীর এই বৈঠকের প্রস্তাব করে সময় নেওয়ার জন্যে, যে সময়ের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় এক লক্ষ সৈন্য শ্রীলঙ্কা হয়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে আনার জন্যে।  

পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য আনা সমাপ্ত হওয়ার পর পাকিস্তানীদের সাজানো এবং শেখ মুজিবুর রহমানের রাজি হওয়া গোলটেইবল বৈঠক ভেঙ্গে যায় ১৯৭১ সালের ২৩শে মার্চ। আর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী বাহিনী রাত ১২টায় শুরু করে অপারেইশন সার্চলাইট নামে বাঙালী নিধান বা গণহত্যা। 
বাঙালীর ওপর পাকিস্তানীদের এই যে ঘৃণা ও আক্রোশ, এর মূলে আছে বর্ণবাদ, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় রেইসিজম (জধপরংস), যার মূলে আছে এই উপমহাদেশের প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণবাদী সমাজ ব্যবস্থা ও বৈদিক বিশ্বাস। এই ব্যবস্থা ও বিশ্বাস অনুযায়ী সমাজ বিন্যাসের সর্বোচ্চে আছে ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত বা বিদ্বান শ্রেণী, তারপর আছে ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা শ্রেণী, তারপর বৈশ্য বা ব্যবসায়িক শ্রেণী, যারা মূলতঃ বহিরাগত গৌরবর্ণের, উন্নত নাসার আর্য। আর, সর্বনিম্নে আছে কৃষ্ণবর্ণের শূদ্র, যাদেরকে স্পর্শ পর্যন্ত করা নিষিদ্ধ। 

অবিভক্ত ভারত ইসলাম ধর্মাবলম্বী আরব, আফগান, ইরানী ও তুর্কী দিগ্বিজয়ীদের পদানত হওয়ার পর তারা যে ইসলামিক সাম্যের বাণী প্রচার করে এবং তাদের দৈনন্দিন ধর্মীয় উপাসনা ও উদযাপনে প্রদর্শন করে, তার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে শূদ্রগরিষ্ঠ বাংলার জনগণ ব্যাপকভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির প্রভাবে বঙ্গজ বাঙালী প্রধানতঃ আতরাফ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং বহিরাগত গৌরবর্ণের মুসলমানেরা আশরাফ তথা সম্ভ্রান্ত হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে। 

ইসলাম তত্ত্বগতভাবে সামাজিক সাম্যের বাণী প্রচার করলেও বাস্তবে সেটি ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণবাদের সাথে আপস করে সামাজিক বৈষম্যকেই জারি রাখে। এর ফলে, দার্শনিকভাবে হিন্দুত্বের চেয়েও মুসলমানত্ব অধিকতর অন্তর্দ্বন্দ্ব বা স্ববিরোধিতাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান ইসলামী ভ্রাতৃত্বের তত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হলেও অচিরেই এটি বর্ণাশ্রিত বৈষম্যবাদী অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। আর এই দ্বন্দ্ব নিরসরনের উপায় হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে আবির্ভূত হয় ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী জাতীয়তাবাদ, যা আপাতঃ অন্তর্দ্বন্দ্ব বিমুক্ত, যদিও চূড়ান্ত বিচারে তা ছিলো না। 

ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত হলেও, সমস্যার মূলে যে বর্ণবাদ, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামটি কখনও বাঙালী জাতীয়তাবাদে এবং এমনকি তথাকথিতে মার্ক্সবাদী সাম্যবাদেও গুরুত্ব লাভ করেনি। বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় তথা কথিত সম্ভ্রান্ত মুসলিম আশরাফ (যেমন, শেখ মুজিবুর রহমানের পূর্বপুরুষ আরব থেকে আগত)। 

বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্যে প্রধানতঃ শূদ্র বর্ণোদ্ভূত বাঙালীরাই প্রাণ দেয় এবং আশরাফ শ্রেণী এর নেতৃত্বে থাকে। ফলে, স্বাধীন বাংলাদেশে আজও কালো ও খর্বাকায় বাঙালী কুৎসিত বিবেচিত ও অনাদৃত। অন্যদিকে, গৌরবর্ণের, দীর্ঘকায় বাঙালী সৌন্দর্য্যের ধারক হিসেবে আদৃত। আমি হিরো আলমের প্রমৌটার নই। আমি তার গুণের কথা একটিও লিখিনি। লিখেছি? তার গানের প্রশংসা করেছি? না, আমি হিরো আলমের প্রশংসা  লিখিনি, করিওনি।

আমি হিরো আলমকে বাঙালী জাতির হিরোও মনে করি না। বর্তমান হিরো আলমের প্রতি আশরাফ তথা সম্ভ্রান্ত বাঙালীর যে ঘৃণা, আমি তার বিরোধিতা করছি। আমার এই অবস্থান একদিন হয়তো স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিরো আলমের বিরুদ্ধেই যাবে, যদি এই হিরো আলমই তার শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘতকতা করে উচ্চশ্রেণীতে উঠে (জাতে উঠে) সময় নিজেকে সম্ভ্রান্ত দাবী করে। ২৭/০৩/২০২৩। লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়