শিরোনাম
◈ এক ম্যাচ হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার কা‌ছে সিরিজ হার‌লো ভারত ◈ শ্রম আইন সংশোধন ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন ◈ আমিরাতে আটক বাংলাদেশিদের মুক্তির অনুরোধে চিঠি পাঠাবেন ড. ইউনূস ◈ যেসব এলাকায় শুক্রবার ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না ◈ ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ডিসেম্বরে ঢাকা আসছেন ◈ ডিসেম্বরে এক দিন নিলেই টানা ৪ দিন ছুটি, নভেম্বরে কত দিন? ◈ ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৮০৩ ◈ ইভিএম বাতিল, প্রার্থীর দেশি-বিদেশি আয়ের তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক ◈ সালমান শাহ হত্যা মামলা, আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ◈ গাজীপুরে কিশোরী ধর্ষণ: প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন শায়খ আহমাদুল্লাহর, প্রেমের সম্পর্ক দেখিয়ে ঘটনা হালকা করার অভিযোগ

প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:২৮ রাত
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টাইফয়েড টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি, কেমন আছে টাইফয়েড টিকা নেওয়া শিশুরা ?

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি। গত ১২ অক্টোবর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয় রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা কেন্দ্র থেকে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় ৫ কোটি শিশুকে এ টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) পর্যন্ত ১ কোটি ৭০ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ টিকাদান কর্মসূচি। 

অন্যদিকে এ টাইফয়েড টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। টিকাটি নিলে শিশুদের নানা ধরণের ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া’হবে, শিশুদের জন্য ‘ভালো’ হবে না— এ ধরনের নানা উদ্বেগ সৃষ্টিকারী বার্তা ছড়াচ্ছে তারা। তবে টিকা নেওয়ার পর বেশিরভাগ শিশুরই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি— এমনটিই জানিয়েছে তারা নিজেরাই। বেশিরভাগ শিশুই জানিয়েছে, ইনজেকশন দেওয়ার সময় সামান্য ব্যথা অনুভব করেছিল, তবে পরে একদম স্বাভাবিক ছিল। অভিভাবকেরা জানান, যেসব শিশু আগে থেকেই সিজনাল ঠান্ডা বা হালকা অসুস্থতায় ভুগছিল, তাদের মধ্যে দু’একজন টিকা নেওয়ার দিন রাতে সামান্য জ্বর বা শরীর ব্যথা অনুভব করেছে, কিন্তু পরের দিনই পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে। 

বেইলি রোডের ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আইজা ওয়াজিহা তারাশা (৮) বলেন, ‘টিকা নেওয়ার সময় একটু ব্যথা লেগেছিল। কিন্তু এখন একদম ভালো আছি। স্কুল থেকে সবাইকেই টিকা দিয়েছে, কারো কোনো সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ আবরার হাসান জানান, ‘আমি ১৬ অক্টোবর টিকা নিয়েছি। তখন একটু ইনজেকশনের ব্যথা পেয়েছিলাম। কিন্তু পরের দিন থেকেই ঠিক আছি। এখন কোনো সমস্যা নেই।’

রাজধানীর আগারগাঁও তালতলায় গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ইংলিশ ভার্সনের প্রেপ-২ এর শিক্ষার্থী সার্বিক এমরান বলেন, ‘দুদিন হয়েছে টিকা নিয়েছি। টিকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয়েছিল শরীর খারাপ, কিন্তু বিকালে ঠিক হয়ে যায়। আমার ছোট বোন সেহরিশ এমরান (১ বছর বয়স)ও টিকা নিয়েছে, তারও কোনো সমস্যা হয়নি।’

মোহাম্মদপুর হাউজিং লিমিটেড এলাকায় ডিটার মাইন্ড মডার্ন মডেল স্কুলের পাঁচ বছর বয়সি ছাত্র তাওয়াফ ইবনে রাশেদ বলেন, ‘ইনজেকশন দেওয়ার সময় একটু ব্যথা পেয়েছিলাম, কিন্তু এরপর শরীর খারাপ লাগেনি।’

হাজারীবাগ শেরেবাংলা রোডের টাইফয়েড টিকা কেন্দ্রে থেকে ৮ বছর বয়সি আব্দুল্লাহ আল মাহির টিকা নিয়েছে ১১ দিন আগে। সে জানায়, ‘টিকা দেওয়ার সময় একটু ব্যথা লেগেছিল, কিন্তু এখন সে ভালো আছে।’

তার বাবা মো. জুয়েল বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জে। ঢাকায় হাজারীবাগে থাকি। আমার ছেলে মাদ্রাসায় পড়ে। এলাকার টিকা কেন্দ্র থেকেই টিকা দিয়েছি। প্রথম দিন একটু কান্না করেছিল, কিন্তু এরপর কোনো সমস্যা হয়নি।’

রাজধানীর ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের (বনশ্রী শাখা) পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আনিসা রহমান বলেন, ‘আমি গতকাল টিকা নিয়েছি। ইনজেকশনের সময় একটু ব্যথা পেয়েছিলাম। স্কুল থেকে বলেছে, হাতে ব্যথা বা জ্বর হতে পারে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।’

একে স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া জাহান নিশি (১৪), আরাফাত হাবিব (১০) এবং আব্দুল্লাহ আল নূর (১০) টিকা নিয়েছে ১১ দিন আগে। তারা সবাই জানায়, ‘প্রথম দিন হাত একটু ব্যথা করেছিল, কিন্তু এখন একদম ঠিক আছে।’

হাজারীবাগের শাপলা একাডেমির শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম নেহাল (পঞ্চম শ্রেণি) এবং চতুর্থ শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীও একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে।

রাজধানীর কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র দায়ান মোহাম্মদ শামীম আওলা বলেন, ‘প্রথম যখন টিকা দিয়েছি হাতে একটু ব্যথা করেছিল। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি। দুদিন হয়েছে টিকা নিয়েছি, এখন ভালো আছি।’

হাজারীবাগের শাপলা একাডেমীর প্রধান শিক্ষিক হাসিনা আক্তার যুগান্তরকে জানান, টিকা নেওয়ার পরদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে স্কুলে আসছে এবং আগের মতোই পড়াশোনা ও খেলাধুলায় অংশ নিচ্ছে। কোথাও কোনো উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া বা অনুপস্থিতি দেখা যায়নি।

অভিভাবকরা বলছেন, শুরুতে কিছুটা ভয় থাকলেও এখন তারা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত— কারণ টিকা নেওয়ার পর সন্তানরা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে। শিশুরা যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি শিক্ষক ও অভিভাবকেরা এই জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিকে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি ইতিবাচক ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।

টাইফয়েড টিকা নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন যুগান্তরকে জানান,‘আমাদের সিটি করপোরেশনের টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১২ অক্টোবর থেকে, যা স্কুলগুলোতে চলবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। এরপর আগামী মাসের ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কমিউনিটিতে এই টিকা দেওয়া হবে। ৯ মাসের বেশি থেকে ১৫ বছর বয়স বা নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘২০ অক্টোবর পর্যন্ত আমরা দক্ষিণ সিটিতে ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৬৬ ডোজ দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ৯ লাখ ৬৬ হাজার। সারা দেশে ইতোমধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ শিশু এই টিকা পেয়েছে। কোথাও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সমস্যা দেখা যায়নি।’

ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘এই টিকা একদম নিরাপদ এবং বহু বছর ধরে পরীক্ষিত। বিশ্বের অনেক দেশে এটি ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশেও প্রতিবছর বহু শিশু টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তাই এই টিকা অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি জানান, ক্যাম্পেইন শেষ হওয়ার পর ৯ মাসের বেশি বয়সি নতুন শিশুদের নিয়মিত ইপিআই কর্মসূচির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে এই টিকা দেওয়া হবে। সূত্র: যুগান্তর 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়