ইরাবতি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের প্রভাব পড়েছে মিয়ানমারের তৈরি পোশাক খাতে। আগস্টের পর থেকে ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অন্তত ৬টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, আরও বেশ কিছু কারখানা অতিরিক্ত সময়ের কাজ কমিয়েছে বা কর্মী ছাঁটাই করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আদেশ হ্রাস পাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে মিয়ানমারের পোশাকের চতুর্থ বৃহত্তম বাজার। চলতি বছরের আগস্টে দেশটি মিয়ানমারে তৈরি পোশাকের ওপর শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করেছে। এর ফলে জুতা ও ব্যাগ শিল্পে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে।
ফেডারেশন অব জেনারেল ওয়ার্কার্স মিয়ানমার (এফজিডব্লিউএম)-এর মুখপাত্র মা ই বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি কারখানা ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মালিক অতিরিক্ত সময় (ওভারটাইম) বাতিল করছেন বা কর্মী ছাঁটাই করছেন। শ্রমিকদের ভয় এখন—মালিকেরা যেন হঠাৎ পালিয়ে না যায়।”
শ্রমিক সংগঠনগুলোর তথ্যে জানা গেছে, যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই চীনা মালিকানাধীন। এগুলো ইয়াঙ্গুনের শ্বেপিথা এলাকার ওয়ার তায়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, হ্লাইং থারয়ারের মিয়া সাইন ইয়াউং জোন এবং শ্বে লিন বান জোনে অবস্থিত। বড় ক্ষতিপূরণ এড়াতে অনেক মালিক সম্পূর্ণ বন্ধ না করে উৎপাদন সীমিত করে দিচ্ছেন। মা ই বলেন, “তারা পুরোপুরি বন্ধ না করে ছোট করে ফেলছে, এতে শ্রমিকদের খরচ কমে যায়।”
মিয়ানমারের কাটিং, মেকিং অ্যান্ড প্যাকিং (সিএমপি) খাতে প্রায় ৮ লাখ মানুষ কর্মরত। কিন্তু ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই খাতটি সংকটে রয়েছে—আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বিদ্যুৎ ঘাটতি, জ্বালানি সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণে রপ্তানি আয় কমেছে। সরকার বাধ্যতামূলকভাবে রপ্তানি আয়ের মুদ্রা বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দরে রূপান্তরের নীতি চালু করেছে।
হ্লাইং থারয়ারের এক কারখানা মালিক দ্য ইরাবতীকে বলেন, “আগের মৌসুমের তুলনায় অর্ডার ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ডার না বাড়লে পরিস্থিতি উন্নতি হবে না। বিশেষ করে ব্যাগ ও জুতার অর্ডার তীব্রভাবে কমে গেছে।”
মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ) জানায়, আগস্ট পর্যন্ত তাদের ৫৮৯টি সদস্য কারখানার মধ্যে ৫৬টির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্যালাওয়ে গলফ কোম্পানি ও স্যামসোনাইট ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য তৈরি করা টুইঙ্কল (মিয়ানমার) নামের কারখানাটি আগস্টেই কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ইয়াঙ্গুনের মালিকেরা জানান, জান্তা সরকারের আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে কাঁচামাল সংগ্রহেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
হ্লাইং থারয়ারের এক শ্রমিক বলেন, “আগে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ওভারটাইম করতাম, এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। তারা বলছে, কাঁচামাল আসছে না, অর্ডারও নেই। এতে মজুরি কমে গেছে, অনেক সহকর্মী চাকরি হারিয়েছে।” অনুবাদ: বাংলাদেশ প্রতিদিন