জন্মসূত্রে আমরা সবাইই একটি দেশের নাগরিক। তবে আধুনিক বিশ্বে জীবন ও ক্যারিয়ারের নতুন সম্ভাবনার খোঁজে অনেকেই চান দ্বৈত নাগরিকত্ব। বিশেষ করে, ভিনদেশি কাউকে বিয়ে করে অনেকেই সুযোগ পান অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার। একসময় বন্ধুত্ব গড়ে উঠত চিঠির মাধ্যমে। আজকের দিনে প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বজুড়ে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক গড়ে তোলা আগের তুলনায় অনেক সহজ। পড়াশোনা, চাকরি বা ভ্রমণের সূত্রে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক, যা শেষ পর্যন্ত পরিণতি পায় বিয়েতে। এমন পরিস্থিতিতে কিছু দেশ রয়েছে যারা বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্বের সুযোগ দেয়। কোথাও এই প্রক্রিয়া খুব সহজ, আবার কোথাও কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু দেশের কথা।
১. কেপ ভার্ড: আফ্রিকার পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভার্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এই দেশের নাগরিককে বৈধভাবে বিয়ে করলেই আপনি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন—তাও কোনো ধরনের সময় ক্ষেপণ বা দেশটিতে আগে বসবাস করার বাধ্যবাধকতা ছাড়াই। প্রক্রিয়াটি সহজ ও দ্রুত।
২. স্পেন: দক্ষিণ ইউরোপের বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ স্পেন। এখানে স্প্যানিশ নাগরিককে বিয়ের পর এক বছর একসঙ্গে বসবাস করলেই নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। আবেদন করতে হলে প্রয়োজন বৈধ বিয়ের সনদ ও একসঙ্গে থাকার প্রমাণ। স্প্যানিশ ভাষায় মৌলিক দক্ষতা ও দেশটির সংস্কৃতি সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান থাকলে সেটি বাড়তি সুবিধা দেয়। এছাড়া, স্পেনের নাগরিকত্ব পেলে কিছু লাতিন আমেরিকান দেশ, ফিলিপাইন ও পর্তুগালের নাগরিকত্বও পাওয়া সহজ হয়।
৩. আর্জেন্টিনা: ফুটবলের দেশ আর্জেন্টিনায় একজন নাগরিককে বিয়ে করলে মাত্র দুই বছর পরেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। বৈধ বিয়ের প্রমাণ, সেখানকার আইন মেনে চলার রেকর্ড এবং সাধারণ স্প্যানিশ ভাষাজ্ঞান থাকলেই আপনি আবেদন করতে পারবেন।
৪. মেক্সিকো: মেক্সিকোর নাগরিককে বিয়ে করে দেশটিতে দুই বছর বসবাস করলেই আপনি নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন। আবেদন করতে হলে থাকতে হবে বিয়ের বৈধ সনদ, একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণ ও স্প্যানিশ ভাষার মৌলিক দক্ষতা। এই দেশের অন্যতম সুবিধা হলো—নাগরিকত্ব পাওয়ার পরও আপনি আগের দেশের পাসপোর্ট রাখতে পারবেন।
৫. তুরস্ক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ তুরস্কে বৈধভাবে বিয়ে করার পর তিন বছর একসঙ্গে দাম্পত্য জীবন কাটালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়। তুরস্কের ভাষা বা সংস্কৃতি জানার প্রয়োজন হয় না, যা এই প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে। তুরস্কের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১০টিরও বেশি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করা সম্ভব।
৬. সুইজারল্যান্ড: কঠোর অভিবাসন নীতি থাকলেও বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব পাওয়া সম্ভব। যদি সুইস নাগরিকের সঙ্গে আপনার বৈধভাবে বিয়ে হয় এবং একসঙ্গে তিন বছর বসবাস করেন, তাহলে পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। দেশের বাইরে থাকলেও ছয় বছরের বৈবাহিক সম্পর্ক থাকলে আবেদন সম্ভব। শর্ত হিসেবে প্রমাণ দিতে হবে আপনি সুইস সমাজে একীভূত হয়েছেন—যেমন ভাষাজ্ঞান, সংস্কৃতিচেতনা ও কোনো অপরাধে যুক্ত না থাকার রেকর্ড।
আরও কিছু দেশ যেখানে শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া হয়।
৭. কানাডা: কানাডার নাগরিককে বিয়ে করলে তাত্ক্ষণিক নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না, তবে বৈধ দাম্পত্য জীবন ও একসঙ্গে বসবাসের প্রমাণের ভিত্তিতে আপনি দ্রুত পাকা স্থায়ী বাসিন্দার (Permanent Resident) হয়ে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাধারণত বিয়ে থেকে তিন বছর পরে নাগরিকত্বের সুযোগ থাকে। ভাষা ও কানাডিয়ান সংস্কৃতির সামান্য জ্ঞান প্রয়োজন।
৮. আয়ারল্যান্ড: আয়ারল্যান্ডে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পেতে হলে স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে তিন বছর বসবাসের শর্ত থাকে। বৈধ বিয়ে ও বসবাসের প্রমাণ দিতে হয়। আয়ারল্যান্ডের নাগরিকত্বের জন্য ভাষা ও সংস্কৃতির ধারণা প্রয়োজন হয়।
৯. ফ্রান্স: ফ্রান্সে বিয়ের পর পনেরো মাস ধরে একসঙ্গে বসবাস করলে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। তবে আবেদন প্রক্রিয়াটি কিছুটা কঠিন এবং ভাষার দক্ষতা ও সমাজে একীভূত হওয়ার প্রমাণ দিতে হয়।
১০. নিউ জিল্যান্ড: এখানে বিয়ে করে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না সরাসরি, তবে বৈধ দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ থাকে। সেখানে সাধারণত পাঁচ বছর বসবাসের পরে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হয়।
১১. ডেনমার্ক: ডেনমার্কে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া যায় না সরাসরি, তবে বিয়ের ফলে পাকা বসবাসের সুবিধা পাওয়া যায়, যেটা পরে নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় হয়। সাধারণত ৯ বছরের বসবাসের পরে নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়।
১২. ব্রাজিল: ব্রাজিলের নাগরিককে বিয়ে করলে এক বছরের মধ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। বিয়ের বৈধতার প্রমাণ থাকা লাগবে এবং বাসস্থানের বিষয়েও কিছু শর্ত আছে।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন দেশে বিয়ের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়মকানুন ভিন্ন এবং সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস বা অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া জরুরি।